শারদীয় দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বছর পূজামণ্ডপ ও দুর্গাপূজার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীও নিয়োজিত থাকবে। স্বেচ্ছাসেবক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও দায়িত্ব পালন করবে। সিসিটিভির মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা পূজা মনিটরিং করা হবে। থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করে কি না, তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দুর্গাপূজা উপলক্ষে তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এবার দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি নেই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সারা দেশে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হবে। পূজার নিরাপত্তায় থাকছেন ২ লাখ আনসার সদস্য এবং অ্যাপসে নজরদারি করবে সংস্থাটি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পূজাকে ঘিরে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ। প্রতিমা তৈরি, মণ্ডপ সাজসজ্জা ও বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সর্বত্র এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হবে।
জানা গেছে, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আজ থেকে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামবেন। তবে এর আগেই নিরাপত্তা কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়েছে মাঠপর্যায়ে। বিভিন্ন বাহিনী এরই মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ফোর্স মোতায়েন শুরু করেছে এবং প্রতিটি থানার আওতায় পূজামণ্ডপগুলোতে টহল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। র্যাব তাদের ১৫টি ব্যাটালিয়নকে পূজা উপলক্ষে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করেছে। প্রায় ৯ হাজার র্যাব সদস্য সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তায় কাজ করবেন। সম্প্রতি রাজধানীর রমনা কালীমন্দির পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবারের দুর্গাপূজা গতবারের চেয়েও নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা গতবারের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে কোনো ধরনের হুমকি নেই। পূজা নির্বিঘ্নে উদ্যাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। তা ছাড়া পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপনের জন্য ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা, পুণ্যার্থী, দর্শনার্থী, পূজা উদ্যাপন কমিটিসহ সাধারণ জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন। পূজার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপের সহায়তায় যে কোনো ঘটনা ঘটলে এর তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সরকারের কাছে চলে আসবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পাশাপাশি নিরাপত্তায় সহযোগিতা করবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, দুর্গাপূজা নিরাপদে সুন্দরভাবে উদ্যাপিত হবে। পুলিশ পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশ প্রাক্-পূজা, পূজা চলাকালীন এবং প্রতিমা বিসর্জন ও পূজা-পরবর্তী তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে পূজাকেন্দ্রিক পুলিশের নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। দুর্গাপূজা চলাকালে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পোশাকে ও সাদাপোশাকে পুলিশের পাশাপাশি সোয়াট, ক্রাইম রেসপন্স টিম (সিআরটি) ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশ সদর দপ্তর এবং অন্যান্য পুলিশ ইউনিটে মনিটরিং সেল চালু থাকবে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ অথবা নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করার জন্য পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। ডিএমপি সদর দপ্তরে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, এ বছর শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। আগের মতো সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুকূল পরিবেশ ও নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর ঢাকা মহানগরীতে ২৫৮টি মণ্ডপে পূজা হবে। মণ্ডপভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনার বাইরে পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও থাকবে। এ ছাড়া প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
এদিকে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপপরিচালক ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকউজ্জামান জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনে আনসার-ভিডিপি এবার প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা চালু করেছে। পূজাকালীন দায়িত্বে থাকা দুই লক্ষাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য এবার প্রথমবারের মতো ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপস’ ব্যবহার করে মাঠপর্যায়ের ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করবেন। শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে দুর্ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে সদর দপ্তরে তথ্য পাঠানো হবে। পরে এ তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।