রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ হাতছাড়া হলে ভবিষ্যৎ থাকবে না

Reporter Name / ১০ Time View
Update : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এর থেকে বেরিয়ে যেও না। তিনি এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সভার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

এ সময় হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। এক পর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। এ সময় পুরো হলরুমে এক দুঃখ-ভারাক্রান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ড. ইউনূসকে কাঁদতে দেখে শিক্ষার্থীদের অনেকের চোখে পানি চলে আসে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়কালে ধর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশে রাজনীতি বন্ধ করার সুপারিশ জানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সম্মুখ সারির শিক্ষার্থী ও সমন্বয়করা। একই সঙ্গে তারা শিক্ষাঙ্গন রাজনীতিমুক্ত করা, মব জাস্টিস বন্ধ করা, অর্থ পাচারের পাশাপাশি বিদেশে মেধা পাচার প্রতিরোধ করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ জানান। অধ্যাপক ইউনূস গত ১৫ বছরের অপশাসনের কথা স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের বলেন, এতদিন তারা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে ছিল এবং আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। এরা কি এখন চুপচুপ বসে থাকবে। না, তারা খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদের দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার। চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবে না। কাজেই যে কাজ শুরু করেছ, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।

দেশের সফল অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত এই সুযোগ আসেনি। তবে সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না। রাষ্ট্র আর থাকবে না। কাজেই এটা শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা করতে হবে।

তরুণরা কোন জাদুমন্ত্রে বাংলাদেশে বিপ্লব সংঘটিত করেছে, তা দেখতে সারা দুনিয়ার মানুষ এদেশে আসবে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুনিয়ার মানুষ দেখতে আসবে, তোমাদের কাছ থেকে শিখতে আসবে। তোমাদের কাছে জানতে চাইবে- কোন মন্ত্র দিয়ে এই বিপ্লব করেছ। এই মন্ত্র তারা শিখতে চাইবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের মন্ত্র কী, সেটা হয়তো তোমরা বুঝতে পারছ না। এটা একটা বড় মন্ত্র। এই মন্ত্র ধরে রাখ। মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায়, আমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে। সেই দুঃখ যেন আমাদের দেখতে না হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন থেকে যদি আমরা দূরে সরে যাই, দেশবাসী তাহলে আমাদের সতর্ক করে দেবে। আমাদের কারোর কোনো ইচ্ছা নেই এই স্বপ্নের বাইরে যাওয়ার। আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ হলো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। একযোগে এই কাজ করতে হবে।

শহীদদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা শহীদ হয়েছে, তাদের স্মরণ করি। যারা শহীদ হয়েছে, তারা চলে গেছে। তোমাদের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম তোমরাও শহীদ হয়ে যেতে পারতে। শহীদরা আজ আমাদের সঙ্গে বসতে পারত, সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। আহতদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ড. ইউনূস বলেন, যখন হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের দেখার জন্য যাই, তাদের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। একটা ছেলে, একটা মেয়ে এরকমভাবে কীভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই দিকে পা চলে গেছে, ওই দিকে মাথা। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ড. ইউনূস বলেন, একজন তাজা তরুণ রংপুরে আমাকে বলল, ফুটফুটে একটা ছেলে, স্যার আমি সারা জীবন ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেন আমার পা কেটে ফেলেছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে স্যার ক্রিকেট খেলব কী করে? ক্রিকেট তার মাথা থেকে যাচ্ছে না। নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে আহতদের দেখতে যাওয়ার কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, গতকাল একটা হাসপাতালে গেলাম আবার সেই দৃশ্য কচি কচি প্রাণ, মাথার খুলি উড়ে গেছে। মাথার অর্ধেক নাই, গুলি মাথার ভিতর রয়ে গেছে। রংপুরের হাসপাতালের দৃশ্য, এক্স-রেতে দেখা যাচ্ছে ওখানে দাগ ছোট ছোট ফুটো করা, আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে কী দেখাচ্ছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম। এগুলো কী? এতগুলো গুলি তার শরীরে রয়ে গেছে, সে বেঁচে আছে রাবার বুলেট, যতবার দেখি যতবার শুনি আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয় যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করব। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তিনি বলেন, আমাদের যোগ্যতা না থাকতে পারে, ক্ষমতা না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা রইল, আমরা স্বপ্নপূরণ করব। হাসপাতালের দৃশ্য এবং আন্দোলনের প্রতিদিনের ঘটনা মানুষকে জানাতে হবে বোঝাতে হবে এর পেছনে কী ছিল।


আপনার মতামত লিখুন :

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri