themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ইন্টারনেটের এই যুগে আমরা স্মার্টফোনের গেম খেলতে খেলতে সত্যিকারের খেলা প্রায় ভুলতেই বসেছি! কিন্তু খেলাধুলা করা দেহের জন্য যেমন দরকারি, তেমনি মনের সুস্থতায়ও উপকারী। আর হ্যাঁ, খেলাধুলা শুধু ছোট বাচ্চাদের জন্য না, বড়দের জন্যও অনেক দরকারি।
শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির শাহনগরে প্রগতি সংঘ আয়োজিত ‘শফিউল আজম স্মৃতি প্রগতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’র ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ছোট বাচ্চাদের খেলার উপকারিতা শেখাতে গিয়ে নিজের ব্যাপারটাও ভুলে যাবেন না। ঘর ও কাজের মাঝে প্রতিদিন ৩০ মিনিট সময় বের করুন খেলার জন্য, পরিবারের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন এই ব্যাপারে। আর অবশ্যই একে বাধ্যবাধকতা না মনে করে খেলাকে শখ হিসেবে গ্রহণ করুন, পরিবারের সাথে খেললে পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে, সাথে সময়টাও কাটবে আনন্দে। খেলাধুলা মানুষের জীবনিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
প্যানেল চেয়ারম্যান সারোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক মোস্তফা কামরুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জহির আজম চৌধুরী, অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিন, এম মোরশেদ হাজারী, সৈয়দ জাহেদ কুরেশী, মুন্সী আকতার হোসেন, মাহবুবুল আলম, নাছির উদ্দিন, মোস্তফা কামাল, ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, ওসমান তাহের সম্রাট, নাসির শিকদার ও আমিন তালুকদার।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষা এমন একটি মাধ্যম, যার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক পরিপূর্ণতা, সুস্থতা ও বিকাশ সাধন সম্ভব। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলার মাঠ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। খেলাধুলার প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। অথচ বুদ্ধির বিকাশে লেখাপড়ার পাশাপাশি ভূমিকা রাখে খেলাধুলা। খেলাধুলা শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক বিকাশসহ বিভিন্ন উপায়ে শিখতে এবং বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। খেলাধুলা শিশুর সৃজনশীলতা ও কল্পনা বিকাশেও সহায়তা করে।
খেলাধুলা শুধু শারীরিক কার্যকলাপ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি একটি উন্নত শিল্পও বটে। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে। সুস্থ দেহ ও মন কাজের প্রতি আগ্রহ এবং কাজের গতি বাড়ায়। খেলাধুলার মাধ্যমে একজন মানুষ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভের পাশাপাশি ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও নেতৃত্বের গুণ অর্জন করে। কিন্তু আমাদের দেশে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় বর্তমান প্রজন্ম শারীরিকভাবে দুর্বল হয় এবং মানসিকভাবে বিষণ্নতায় ভোগে, বিপথগামী ও মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে এবং নিজেদের কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত করে। আবার অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যেভাবে মোবাইল ফোনে আসক্ত হচ্ছে, তাতে আমাদের সামনে একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ জাতি অপেক্ষা করছে। শিক্ষার্থীরা এখন মাঠে যেতে চায় না। তারা এখন স্ক্রিনেই সময় কাটায় বেশি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের দেশে একদিকে খেলাধুলা এবং শারীরিক শিক্ষা কমছে, অন্যদিকে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানারকম শারীরিক ও মানসিক রোগ বাড়ছে।
গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ছিল : হাডুডু, ঘুড়ি খেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, কুস্তি, গোশত চুরি, কুতকুত, চোর-পুলিশ, হাড়িভাঙা, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, কড়ি খেলা, সাপ খেলা, কানামাছি, লাঠি খেলা, ষাড়ের লড়াই, বউ-ছি, বলী খেলা, টোপাভাতি, নোনতা খেলা, নৌকা বাইচ, লুডু খেলা, রুমাল চুড়ি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ ছাগল, বরফ পানি, মার্বেল, মোরগ লড়াই, লাটিম, লুডুসহ আরও হাজার প্রকার খেলা। বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের জনপ্রিয় এসব গ্রামীণ খেলাধুলা আজ প্রায় বিলুপ্ত।
গ্রামীণ এসব খেলাধুলা হলো বিনোদনমূলক, স্বাস্থ্য সচেতনমূলক ও প্রতিভা বিকাশের অন্যতম। যা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করতো। বর্তমানে গ্রামীণ খেলাগুলো বিলুপ্ত হতে হতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এই নেতা বলেন, দেশ ও জাতিগঠনে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার স্তরগুলোয় খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। তা না হলে বছরে দুই-চারটি টুনার্মেন্টের আয়োজন করা রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শারীরিক শিক্ষার প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা অবহেলিত, উপেক্ষিত, বিশেষ করে কলেজ পর্যায়ে।
কলেজ পর্যায়ে শুধু শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলাই অবহেলিত নয়, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকরাও চরমভাবে অবহেলিত। কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি চালুর মাধ্যমে এ বিষয়ের শিক্ষকদের প্রভাষক পদমর্যাদায় উন্নীত করে তাদের মেধা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটনোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, মেধা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানো সম্ভব। আর এর ইতিবাচক ফল ভোগ করবে সমগ্র জাতি। শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা আগামী দিনে একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, দক্ষ এবং অর্থনৈতিকসমৃদ্ধ দেশ গঠন করতে পারব বলেও জানান তিনি।