Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the themesdealer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
তিনি ঘুষ খান না কমিশন নেন তিনি ঘুষ খান না কমিশন নেন – notunalonews24

তিনি ঘুষ খান না কমিশন নেন

Reporter Name / ৩০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। সাড়ে ১২ বছর ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্বে। ১১ বছর তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’। রাজনীতিতে কর্কশ এবং কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তার জন্য সবাই তাকে উপহাস করে ডাকতেন ‘কাউয়া কাদের’। দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তার জন্য তিনি ছিলেন ব্যাপক সমালোচিত। তার পরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন কাদের। মুখে যা বলতেন, বাস্তবে করতেন তার উল্টো। বলেছিলেন, ‘পালাব না’। কিন্তু তিনি পালিয়ে গেছেন। কাকের মতো কণ্ঠস্বরে সুরে সুরে তিনি কথা বলতেন। এজন্য দেশের জনগণ তাকে ডাকত কাউয়া কাদের। কাদের সব সময় কথা বলতেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনিই ছিলেন মহাদুর্নীতিবাজ। সাড়ে ১২ বছর সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগে তিনি ‘ঘুষ’ উঠিয়ে দিয়েছিলেন বলে দাবি করতেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঘুষের বদলে তিনি চালু করেছিলেন ‘কমিশন’ পদ্ধতি। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগে যে কোনো কাজের জন্য ২০ শতাংশ কমিশন ছিল কাদেরের জন্য। এ কমিশন ডিপিপি করার সময় প্রকল্পের খরচের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকত। এ কমিশনের টাকা পেলেই ঠিকাদারদের মিলত কার্যাদেশ। ছোট হোক, বড় হোক কাজ করলেই কাদেরকে কমিশন দিতে হবে। কমিশনের টাকায় ওবায়দুল কাদের গড়েছেন কালো সম্পদের পাহাড়। ১২ বছরে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ থেকে লুটেছেন ১ লাখ কোটির বেশি টাকা।

তাঁর মন্ত্রিত্বকালে সওজে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৭ কোটি ব্যয় হয়েছে নির্মাণকাজে। ১৫টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মোট ব্যয়ের ৭২ শতাংশ কাজ পেয়েছে। এ ১৫ প্রতিষ্ঠানই কাদেরকে নিয়মিত কমিশন দিত।

বিশ্বব্যাংকের মতে সড়ক নির্মাণ অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত শিল্প। বাংলাদেশে চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় ২১ থেকে ১০০ কোটি টাকা, যা প্রতিবেশী ভারতের ৯ গুণ এবং ইউরোপের দ্বিগুণ। প্রকল্প প্রণয়নের সময় উদ্দেশ্যমূলক ব্যয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি ধরা হয়। এর মধ্যে ২০ শতাংশই কাদেরের জন্য নির্ধারিত ছিল। বাকি ১০ শতাংশ অন্যদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা হতো।

সরকারি ক্রয় আইন (পিপিএ) ২০০৬ এবং সরকারি বিধিমালা (পিপিআর) ২০০৮ অনুযায়ী, দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। জালিয়াতির কারণে ৪৪টি প্রতিষ্ঠানকে গত জুলাই পর্যন্ত কালো তালিকাভুক্ত করে সওজ। কালো তালিকাভুক্তির প্রধান কারণ কমিশনের টাকা পরিশোধে গাফিলতি। কাদেরের কাছে কমিশনের টাকা ঠিকমতো না পৌঁছলেই কালো তালিকাভুক্ত হতো ওই প্রতিষ্ঠান।

কাদেরের মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ ১০ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ আমলে ৬ হাজার ৫০৯টি কার্যাদেশ পেয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১৭ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিতে ৪০ হাজার ২৩২টি কার্যাদেশ পেয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ৮৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ওবায়দুল কাদের, তাঁর স্ত্রী, ভাই ও আত্মীয়রা সম্পৃক্ত ছিলেন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যাদেশ পাওয়ায়। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরাও ছিলেন কিছু ঠিকাদারের পেছনে।

ইজিপি প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে সর্বোচ্চ ১০ এবং সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ দর দিতে পারেন। সওজ সূত্র জানিয়েছেন, কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে প্রাক্কলিত ব্যয় জানিয়ে দেওয়ায় দরপত্র জমা দেওয়া ঠিকাদারের মধ্যে সর্বনিম্ন দর প্রায় ক্ষেত্রেই সমান হয়। এ ক্ষেত্রে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ‘পাস্ট পারফরম্যান্স ম্যাট্রিক্স’ পদ্ধতিতে। ৩০০ নম্বরের এ মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ১৪০ নম্বর আগের পাঁচ বছরে সম্পাদিত কাজের সংখ্যার জন্য। ১০০ নম্বর পাঁচ বছরে সম্পাদিত কাজের আর্থিক মূল্যের জন্য। ঠিকাদারদের চলমান কাজের আর্থিক মূল্যের জন্য ৬০ নম্বর রয়েছে। এভাবেই মন্ত্রণালয়ে একটি কমিশন সিন্ডিকেট তৈরি করেন ওবায়দুল কাদের। যেখানে তাঁর সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া কারও কোনো কাজ প্রাপ্তির সুযোগ ছিল না।

দুর্নীতির জন্য ঠিকাদারদের চাপে কাদের হাওরসহ জলাভূমি, কৃষিজমি অধিগ্রহণে সুনির্দিষ্ট নিয়ম লঙ্ঘন করে হাওরে সড়ক নির্মাণ করেছেন। ওইসব সড়কে ২৬ হাজার গাড়ি চলার পূর্বাভাস দেওয়া হলেও কিছু অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি আজ পর্যন্ত।

প্রকল্পকে আর্থিকভাবে লাভজনক দেখিয়ে অনুমোদনের জন্য অতিরঞ্জিত তথ্যে ভরা সমীক্ষার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন (ডিপিপি) ও মূল্যায়ন পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। ‘ফরমায়েশি’ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রণয়ন করে তা ডিপিপির সঙ্গে জমা দেওয়া হয়। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ডিপিপি প্রণয়নের নজির রয়েছে। প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে সওজের বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যালয়প্রধান নিজে ডিপিপি করেন। কখনো কখনো পরিকল্পনা কমিশনে খুব দ্রুততার সঙ্গে ডিপিপি মূল্যায়নের চাপ আসে। কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প অনুমোদন সভায় ডিপিপির ওপর মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ জানার জন্য সওজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কর্মচারীদের ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেন। প্রকল্প অনুমোদন করাতে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইএআই) প্রতিবেদন যেভাবে প্রয়োজন, টাকার বিনিময়ে সেভাবেই করা হতো। কারণ কাদের ছিলেন সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তাঁর মন্ত্রণালয়ের কাজ আটকে রাখবে সাধ্য কার?

ডিপিপি প্রণয়নের সময়ই অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য ২৫-৩০ শতাংশ বাড়তি ব্যয় প্রাক্কলন করা হতো। সওজের স্থানীয় দপ্তর ডিপিপি তৈরির সময় ওবায়দুল কাদের ও অন্যদের ‘লাভের’ অংশ নিশ্চিত করে রাখেন। অনিয়ম-দুর্নীতি শুরুই হয় ডিপিপি থেকে।

ঠিকাদারি কাজ কে পাবে, তা ডিপিপি তৈরির সময়ই নির্ধারিত হয়ে যেত।

ডিপিপিতে কোনো কোনো কাজ অতিরিক্ত হিসেবে ধরে রাখা হয়, যা করতে হবে না; কোন খাতে কত টাকা বাঁচানো যাবে; প্রকৌশলী ও ঠিকাদার আগেই জানেন। আবার প্রকল্পে স্যালভেজ থাকলে তার প্রকৃত পরিমাণ ও অর্থমূল্য এ দুজনই জানেন। প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় কত ধরতে হবে, তা প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা বসে ঠিক করতেন।

প্রকল্প পরিচালক নিয়োগেও অনিয়ম-দুর্নীতি হতো। কাদেরের পছন্দের বাইরে কাউকে প্রকল্প পরিচালক করা হতো না। সওজ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ ১২টি পর্যন্ত প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে পদায়নের দৃষ্টান্ত ছিল। কারণ কাদেরের কমিশন ঠিকঠাক বুঝে নিতে সিদ্ধহস্ত। এভাবেই সড়ক ও সেতু বিভাগকে কাদের বানিয়েছিলেন ‘কমিশন মন্ত্রণালয়’।


আপনার মতামত লিখুন :

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri