জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে টানা দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে তাঁরা জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণের বিষয়ে ঐকমত্যে আসেন। যা সমগ্র জাতির জন্য এক স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা অনেকাংশেই দূরীভূত হয়। দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকে নির্বাচন ছাড়াও দেশের আরও গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গণহত্যাসহ অপরাধীদের বিচার এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ও সংস্কার কার্যক্রম আরও এগিয়ে নেওয়ার ওপরও তাঁরা অধিক গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে ও পরে সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন উভয় নেতা। এসব বিষয়ের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি উভয় পক্ষের ঘোষিত সংক্ষিপ্ত যৌথ বিবৃতিতে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একমত পোষণ করে জানান, ‘আমরা উভয় পক্ষই বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্ট। এমনকি নির্বাচনের পরও আমরা সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।’ বৈঠকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।
বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিগগিরই নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের একটি তারিখ ঘোষণা করবে।
বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজান শুরুর আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। তিনি তাঁর মা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।
এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করার প্রয়োজন হবে।
তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের সময় ও তারিখ প্রসঙ্গে কী আলোচনা হলো, জানতে চান সাংবাদিকরা। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সমস্যা কোথায়? এর জবাবে উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। কেউ দেখলে ভুল দেখছেন। নির্বাচন সম্পর্কে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আমরা আশা করব, শিগগিরই তারা একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’
বৈঠকে শুধু নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে, নাকি রাজনৈতিক অন্যান্য বিষয়েও কথা হয়েছে, জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটি করব। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐকমত্য হয়েছি, তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’