মিয়ানমারে উৎপত্তি হওয়া ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার ভূমিকম্পে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন ৩০ তলা ভবন নিমিষে ধসে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এটি একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। নিখোঁজ হন ৪৩ শ্রমিক। এ ছাড়া মিয়ানমারে ১৪৪ ও থাইল্যান্ডে আটজন মারা যান। এই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশও। ধসে পড়া ভবনটি সরকারি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছিল। ভূমিকম্পে ব্যাংককে আরও কিছু ভবন ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরে মিয়ানমারে শক্তিশালী ওই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, মিয়ানমারের সাগাইং শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি। ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৭। কয়েক মিনিট পর একই এলাকায় ৬ দশমিক ৪ তীব্রতার একটি আফটারশক অনুভূত হয়। থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে লিখেছেন, তিনি ভূমিকম্পের পর ‘জরুরি বৈঠক’ করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন।
মিয়ানমারে ১৪৪ জন নিহত : মিয়ানমারে অন্তত ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডে নিহত হয়েছেন অন্তত আটজন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, স্থানীয় সময় গতকাল বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় শহর মান্দালয়ের কাছে ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। প্রায় ১১ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়। প্রতিবেশী বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও ভিয়েতনামেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার ভূমিকম্পকে শক্তিশালী বলে ধরা হয়। এটার উৎপত্তিস্থল মাটির প্রায় ছয় মাইল গভীরে। কম গভীরতায় হওয়ায় কম্পন ভয়াবহভাবে অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পে মান্দালয়ে অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বিপুলসংখ্যক আহত মানুষ হাসপাতালে ভিড় জমান। অন্যদিকে হাসপাতালে ভর্তি অনেক মানুষ আতঙ্কে বের হয়ে আশপাশের গাড়ি রাখার স্থান ও সড়কে চলে যান।
৪৫ বছর বয়সী দাউ কি শোইন জানান, তাঁর তিন বছর বয়সি মেয়ে নিহত হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় তারা মধ্যাহ্নভোজ করছিলেন। ভূমিকম্পে দাউ কি শোইনও আহত হন। হাসপাতালের সামনে যখন এই নারী কথা বলছিলেন, তখন তাঁর শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আমি দৌড়ে নিচতলায় চলে যাই। আমি আবার আমার মেয়েকে আনতে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করি। তখন আমার ওপর ইট পড়ে।’ হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সেবা নেই জানিয়ে দাউ কি শোইন বলেন, ‘আমি মারা যাচ্ছি। কিন্তু আমি মরতে চাই না। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।’ মিয়ানমারের রাষ্ট্রয়াত্ত সংবাদমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পে ব্রিটিশ আমলে তৈরি সাগাইং সেতু ভেঙে গেছে। এটি মিয়ানমারের মান্দালয় ও সাগাইং অঞ্চলে ইরাবতী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছিল। এ ছাড়া রাজধানী নেপিদোতে অনেক ভবন ধসে পড়েছে।
মিয়ানমারের ছয় অঞ্চলে জরুরি অবস্থা : মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের একজন উদ্ধারকর্মী বিবিসিকে বলেছেন, ভূমিকম্পে ‘ব্যাপক’ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ‘অন্তত কয়েক শ’ মানুষ হতাহত হয়েছেন।
মান্দালয়ের একজন বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, ‘সবকিছু কাঁপছিল, তখন আমরা সবাই বাইরে বের হয়ে আসি। আমি চোখের সামনে একটি পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই বেরিয়ে রাস্তায় এসেছে। কেউ ভবনের ভিতরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছে না।’ মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে ভবন ধসে পড়েছে। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর সড়কে ফাটল ধরেছে। দেশটির সামরিক সরকার অন্তত ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি পরাঘাত হয়েছে। এর কেন্দ্রও ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি।
মিয়ানমারে বাংলাদেশি নাগরিকরা নিরাপদ রয়েছেন-রাষ্ট্রদূত : মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগ?রিকরা নিরাপদ রয়েছেন। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ তথ্য জানান দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমারে অবস্থানরত সব বাংলাদেশি নাগরিক নিরাপদ রয়েছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় একটি শক্তিশালী ৭ দশমিক ২ এবং ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প উত্তর মিয়ানমার অংশে অনুভূত হয়েছে। এতে বেশ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর প্রকাশ হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।