Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the themesdealer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
বর্ষা যেতেই দূষণে কালো ঢাকার ৪ নদী বর্ষা যেতেই দূষণে কালো ঢাকার ৪ নদী – notunalonews24

বর্ষা যেতেই দূষণে কালো ঢাকার ৪ নদী

Reporter Name / ৩ Time View
Update : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

ওরে নীল দরিয়া, আমায় দেরে দে ছাড়িয়া…’। আবদুল জব্বারের গাওয়া সত্তরের দশকের ‘সারেং বউ’ সিনেমার গানটি মানুষের হৃদয়ে আজও জীবন্ত। তবে মৃত্যু ঘটেছে সেই দরিয়ার (নদী)। শিল্প বর্জ্য ও স্যুয়ারেজ দূষণে দরিয়ার সেই নীল পানি এখন আলকাতরার মতো কুচকুচে কালো। হারিয়ে গেছে মাছসহ নানা জলজ প্রাণী। দুর্গন্ধযুক্ত সেই পানিতে বসতি হয়েছে মেক্সিকোয় ‘শয়তান মাছ’ হিসেবে পরিচিত রাক্ষুসে সাকার মাছের। রাজধানীর ধমনিখ্যাত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর বর্তমান অবস্থা এমনই। গত এক যুগে নানা উদ্যোগ ও আশাজাগানিয়া রাজনৈতিক বক্তব্যের পর আজও অস্তিত্ব সংকটে ধুঁকছে নদীগুলো। একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনে নদীগুলোর তীরবর্তী এলাকায় আবাদ করা ধান ও শাক-সবজিতে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর ভারী ধাতু। মাছের দেহে মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকসহ নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল ও ভারী ধাতু- যা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত এক সপ্তাহে সরেজমিন নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, ঘন ও কুচকুচে কালো হয়ে গেছে পানি। ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ সেই পানিতে। শীতলক্ষ্যার পানি তুলনামূলক কিছুটা কম দূষিত মনে হলেও তুরাগ, বুড়িগঙ্গা ও বালু নদীর দূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বালু নদীর ইছাপুরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর তলদেশ থেকে বুদ্বুদ আকারে উঠছে গ্যাস। নদীর পাড়ের মাটিতে জমেছে কালো ময়লা। এখনো টিকে থাকা অল্প কিছু মাছ অক্সিজেনের অভাবে খাবি খাচ্ছে (বার বার পানির ওপরে উঠে আসা)। বসিলা ও টঙ্গী এলাকায় তুরাগ নদে গিয়েও ভয়াবহ দূষণের চিত্র চোখে পড়েছে। পানি এতটা কালো যে, তিন ইঞ্চি নিচে কী আছে তা দেখা যায় না। দুর্গন্ধে নদীর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। বাবুবাজার ও সদরঘাট এলাকায় গিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতেও একই চিত্র চোখে পড়েছে। মানুষ নদী পার হচ্ছে নাকে রুমাল চেপে। অন্যদিকে জেলেরা নদীতে জাল ফেললে উঠে আসছে শুধু ময়লাখেকো রাক্ষুসে সাকার মাছ।

সরেজমিন দেখা যায়, বর্ষার বিদায়ে নদীর পানি কমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হয়েছে নদীতে বর্জ্য ফেলার স্যুয়ারেজ লাইনগুলো। বুড়িগঙ্গা নদীর বাবুবাজার ব্রিজের নিচ থেকে আদি বুড়িগঙ্গার দিকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ৩৫টির মতো স্যুয়ারেজ লাইন ও নর্দমার পাইপ চোখে পড়েছে। এগুলো দিয়ে বিরামহীন নদীতে পড়তে দেখা গেছে শিল্প ও পয়োবর্জ্য মিশ্রিত পানি। পানির নিচেও কিছু পাইপ আছে বলে জানান স্থানীয় এক নৌকার মাঝি। নদীর পাড়ে বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়েছে বর্জ্যরে স্তূপ। অথচ, ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা ঘিরে থাকা চার নদীর পানি স্বচ্ছ টলমলে হয়ে উঠবে বলে স্বপ্ন দেখিয়েছিল নদী রক্ষা কমিশন। বলা হয়েছিল, নদীতে আর পড়তে দেওয়া হবে না শিল্পের বিষাক্ত রঙিন বর্জ্য। দূষিত কালচে পানির উৎকট গন্ধে নাকে রুমাল চাপতে হবে না। টলমলে পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে চলবে নানা প্রজাতির মাছ। সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নদী দূষণকারীদের চিহ্নিত করেছি। পয়োবর্জ্যরে অবস্থা মারাত্মক। শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছি, ঢাকার নদী দূষণকারীদের বিরুদ্ধে একটা অভিযান কর্মপরিকল্পনা করতে। এ ছাড়া সব জেলা থেকে একটা করে নদী দখল আর দূষণমুক্ত করার কর্মপরিকল্পনা পেয়েছি। বিশ্লেষণ করে টাকার জোগাড় করে কাজ শুরু করব। গত ১২ জুলাই ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০১-২০১০ সালের তুলনায় ২০১১-২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে নদ-নদীর দূষণ বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়েছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীকে বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর বেশির ভাগের পানিতে ১০টি ভারী ধাতুর (এএস, পিবি, সিডি, সিআর, এফই, এমএন, সিইউ, সিও, এনআই, জেডএন) উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইউএসইপিএ) এবং বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই) নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে। গবেষণায় কৃষি থেকে সার ও কীটনাশক, ইলেকট্রোপ্লেটিং, বস্ত্র, ট্যানারি ও অন্যান্য শিল্প বর্জ্যকে দূষণের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের জরিপ, জিপিএস মানচিত্র ও স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে ২০১৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে বুড়িগঙ্গায় ২৩৭টি বর্জ্যরে ভাগাড় ও ২৫১টি স্যুয়ারেজ লাইন, তুরাগ নদে (টঙ্গী খালসহ) ১৩১টি বর্জ্যরে ভাগাড় ও ৯৯টি স্যুয়ারেজ লাইন এবং বালু নদীতে ৩২টি বর্জ্যরে ভাগাড় ও ১০টি স্যুয়ারেজ লাইন পায় জরিপকারী সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্স সেন্টার (আরডিআরসি)। সংস্থাটি বাংলাদেশের ৫৬টি নদীর পানি গাজীপুরের গ্রিনবাড ল্যাবে পরীক্ষা করে গত বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, ৫৬ নদীতেই বিপজ্জনক মাত্রায় প্লাস্টিক ও রাসায়নিক দূষণ রয়েছে। রাসায়নিক দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, টঙ্গীখাল, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, লবণদহ, লোয়ার বানার, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, তিতাস, চিলাই, সুতাং, বংশি, হাড়িধোয়া, কর্ণফুলী নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কখনো কখনো নেমে যাচ্ছে ২ মিলিগ্রামের নিচে, যেখানে মাছসহ জলজ প্রাণী বেঁচে থাকতে অন্তত ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা জরুরি। এ বিষয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নিয়মিত নদীগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। গত পাঁচ বছরে একটি স্যুয়ারেজ লাইনও বন্ধ হয়নি। বর্তমানে দূষণ আরও বেড়েছে। দূষণ বন্ধ করতে আমরা একটা অ্যাকশন প্ল্যান করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছি। এটা বাস্তবায়ন করলে ৪০ ভাগ দূষণ কমে যাবে। খরচও বেশি হবে না। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক জার্নাল সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর মাটি, পানি, মাছ, শামুক এবং কাঁকড়াতে বিপজ্জনক মাত্রায় ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। এগুলোতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ যথাক্রমে পানিতে ০.১২-০.২৫ টি/মিলিলিটার, মাটিতে ৩.৫-৮.১৭ টি/গ্রাম, মাছে ০.৬৫-৩.৮২ টি/গ্রাম, শামুকে ৩.৭৫-৪.২৮টি/গ্রাম এবং কাঁকড়াতে ০.৮৪-১.১২ টি/গ্রাম। এ ছাড়া প্রতি কেজি মাটিতে আর্সেনিক ৩৭.৬৮ মিলিগ্রাম, ক্রোমিয়াম ১৫৩ মিলিগ্রাম, ক্যাডমিয়াম ৮.৩২ মিলিগ্রাম ও লেড পাওয়া গেছে ৮৭.১২ মিলিগ্রাম। একইভাবে প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, কেডমিয়াম ও লেডের উপস্থিতি ছিল যথাক্রমে ৩৬.৬২ মাইক্রোগ্রাম, ১৪৬.৬৬ মাইক্রোগ্রাম, ৮.১৬ মাইক্রোগ্রাম ও ৮১.৭২ মাইক্রোগ্রাম। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে এগুলো শরীরে প্রবেশ করে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত, ইমিউনোলজিক্যাল পরিবর্তন, জিনোটক্সিসিটি, এন্ডোক্রাইনে ব্যাঘাত, নিউরোটক্সিসিটি, প্রজনন অস্বাভাবিকতা, আচরণগত পরিবর্তন সাধন করতে পারে বলে জানান গবেষক দলের প্রধান মো. মোস্তাফিজুর রহমান।


আপনার মতামত লিখুন :

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri how many casibom casibom casibom
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri how many casibom casibom casibom