চট্টগ্রাম নগরীর চাঁন্দগাও থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকীকে (১৯) হত্যা মামলায় তাদের অভিযুক্ত করে মামলাটি করেছেন তার চাচা মো. পারভেজ। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো কোনো মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
চাঁন্দগাও থানার ওসি ওসি জাহিদুল কবির বলেন, গত ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া গুলি বর্ষণের ঘটনায় তানভীর নামে এক কলেজছাত্র নিহত হন। এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ এনে নিহতের চাচা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে। মামলাটি তদন্ত করার জন্য পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছাবেদ আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, চকবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী প্রকাশ বাবর আলী, যুবলীগ নেতা মো. কাইসার, মাহবুব আলম, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ, নোমান শরীফ।
এছাড়াও আসামি করা হয়েছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দীন ফরহাদ, মো. দেলোয়ার, মো. জালাল, মো. ফরিদ, সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো. তাহসীন, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন অভি, এইচ এম মিঠু, নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা, আরিফ ইফতেকার রশিদ, ওসমান গণি, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াছ বাবুল, মাইনুল ইসলাম শরীফ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মো. জিয়াউদ্দীন আরমান, যুগ্ম সম্পাদক মনির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ, মো. জাফর, জাফর আলম, মনছুর আবেদীন, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন, বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজান সিকদার, যুবলীগ নেতা মো. শোয়াইবসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার ভাতিজা তানভীর ছিদ্দিকী গত ১৮ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ‘শাট-ডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীরা পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিলযোগে চাঁন্দগাও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপর এসে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের নির্দেশে বাকি আসামিসহ অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জন চাপাতি, কিরিচসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে এসে তানভীর ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপ ও এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এতে তানভীরসহ আন্দোলনকারী অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। পরে তানভীরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।