themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121জুলাই গণ অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভিতর বেশ কয়েকটি ইস্যুতে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে মৌলিক মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও দেখা দিয়েছে অস্বস্তি। এসব অস্বস্তিকে উসকে দিয়েছে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে দলটির শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতার কক্সবাজার সফর। ঐতিহাসিক এই দিনে তাদের আকস্মিক সফর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে দলীয় ভাবমূর্তির ওপর। শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি বলে মনে করেন দলের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দলের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তাদের কাছে। গতকাল দলের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দীন সিফাত জানান, শোকজ নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে শোকজের জবাব নেতারা যথাসময়ে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব বরাবর প্রদান করেছেন। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এদিকে দলীয় শোকজ নোটিসের লিখিত জবাব গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তবে পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসনাত আবদুল্লাহ তার পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন। গণ অভ্যুত্থান দিবসে কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়া ‘অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ’ এমনটি জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় এমন কিছু উপাদান দেখি, যা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। এ দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে একটি বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে।’
হাসনাত দাবি করেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেককেই ওই দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটিকে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যক্তিগতভাবে এ অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কক্সবাজার চলে যান। সফরকালীন অবসরের গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করছেন বলেও জানান হাসনাত। তাদের ঘুরতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে জারি করা শোকজ নোটিস নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসনাত। এ প্রসঙ্গে হাসনাত মনে করেন, পার্টির উচিত ছিল তাদের ব্যক্তিগত সফরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজবে পরিণত করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তার পরিবর্তে পার্টি এমন ভাষায় দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে শোকজ প্রকাশ করেছে, যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে উসকে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে জারি করা শোকজ ‘বিধিবহির্ভূত’ এমন দাবি করে হাসনাত বলেছেন, ‘যে কোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্রের কোনো নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেওয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই, কারণ আমি পার্টির কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি।’ এদিকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তার শোকজ নোটিসের জবাবে লিখেছেন, ‘শোকজ নোটিসটি বাস্তবভিত্তিক নয়। ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।’ তিনি লিখেছেন, ‘আমার এই সফরের লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তাভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণ অভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না।’ এদিকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে দলটির ভিতর। এনসিপি গঠনের পর যে কটি ইস্যু নিয়ে দলটি রাজনীতি করেছে সেগুলোর সমাধান না করেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করায় এ অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে দলটি। এসব দাবি পূরণ হলে আসছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি নেই এনসিপির। দলটি একই সঙ্গে দাবি জানিয়েছে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে তা বাস্তবায়ন করার। জুলাই সনদের বাস্তবায়নের দায়িত্ব দলটি পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। তবে আগামী সংসদ নির্বাচন- গণপরিষদ নির্বাচন আকারে আয়োজন করা হলে তবেই দলটি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এর অন্যথা হলে নির্বাচন বর্জনের দিকে যেতে পারে দলটি।
দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে গড়ে উঠেছে এনসিপি। আমরা আবার নতুন করে কোনো স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার কবলে পড়তে চাই না। বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রণয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে। এ লক্ষ্য অর্জন অসম্পূর্ণ রেখে তড়িঘড়ি নির্বাচন আয়োজন করা হলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হব।