‘আমার ছেলে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশা নিয়ে রাশিয়া গেছে। ১২ লাখ টাকা সুদে এনে বিদেশে পাঠিয়েছি। তাকে কেন যুদ্ধে পাঠানো হলো? তাকে যারা চাকরি দেওয়ার মিথ্যা কথা বলে রাশিয়া নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছে, তাদের বিচার চাই। আমার ছেলেকে ফেরত চাই’— এভাবে নিজ ছেলে নাজির উদ্দিনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কুরমুশী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিন। রাশিয়ায় গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে জীবন সংকটে পড়েছেন তার একমাত্র ছেলে নাজির উদ্দিনের। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠিয়েছেন প্রতারকরা।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে ইরাক গিয়েছিলেন নাজির উদ্দিন। তিন বছর সেখানে চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। নিজ এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু সফল হননি। তাই আবার বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকার একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের মামুন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তাকে রাশিয়ায় পাঠাতে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
নাজির উদ্দিনকে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির কথা বলে পাঠানো হয় রাশিয়ায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পাঠানো হয় সামরিক প্রশিক্ষণে। ১৪ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর নাজির উদ্দিনকে পাঠানো হয় রণাঙ্গনে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নাজিরের। তার চিন্তায় অস্থির তার বাবা, নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তার স্ত্রী। শিশু সন্তান চেয়ে আছে বাবার অপেক্ষায়।
গত ১৫ ডিসেম্বর নাজির উদ্দিন রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। দুবাই হয়ে রাশিয়া পৌঁছান তিনি। তারপর একটি ক্যাম্পে কয়েকদিন রাখা হয়। কিছুদিন পর সেখান থেকে বিমানে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। ওই জায়গায় ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন সীমান্তে নেওয়া হয় তাদের। গত ১৬ এপ্রিল সকালে নাজির উদ্দিন টেলিফোনে কান্না করে বাবা ও স্ত্রীকে জানান, তাদের ইউক্রেনের সম্মুখযুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিনের পর থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নাজির উদ্দিনের।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘাটাইলের কুরমুশী গ্রামে নাজিরদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের চিন্তায় উদ্বিগ্ন বাবা ফয়েজ উদ্দিন। ছেলের খবরের আশায় প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন। স্বামীর চিন্তায় অস্থির স্ত্রী কুলসুম।
ফয়েজ উদ্দিন তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার ও রাশিয়ান দূতাবাসের প্রতি দাবি জানান।