বিশ্বে বাণিজ্যযুদ্ধের দামামা

Reporter Name / ১৫৩ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ঘিরে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধের দামামা বাজছে! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় কানাডা ও চীন। পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে মেক্সিকোও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ বিশ্বকে আরেকটি বাণিজ্যযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জিনিসপত্রে দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশের মতো যেসব রাষ্ট্র মুক্তবাজার ব্যবস্থার সুফল ভোগ করছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

শনিবার কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে নির্বাহী আদেশ দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। শেষ মুহূর্তে এসে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর আরোপ করা শুল্ক ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হলেও চীনের পণ্যে শুল্ক বহাল থাকছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যেও শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বেশি সুবিধা নিচ্ছে। ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যবৈষম্য ৩০০ বিলিয়নের বেশি। তাদের পণ্যে নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তকে ইতিহাসের সবচেয়ে ‘বোকা বাণিজ্যযুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

জবাবে মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো। এদিকে গতকাল শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় মার্কিন পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে চীন। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, খামারের সরঞ্জামাদি ও কিছু যানবাহন আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করবে বেইজিং। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জবাবে শুল্কসহ পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মেক্সিকো।

তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতির আলোকে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রাসেলসে শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন খুব আত্মনির্ভরশীল। আমরা ট্রাম্পের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। অবশ্যই আমরা আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। তবে এটা পরিষ্কার, যদি ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে, তাহলে চীন লাভবান হবে।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্ববাণিজ্যে অন্যতম দুই শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন। এ দুই রাষ্ট্র কেন্দ্র করে অনেক দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ বাণিজ্য সংঘাত বিশ্বের অন্য প্রান্তেও প্রভাব ফেলতে পারে। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প কিছুটা সুবিধা পাবে। তবে সাময়িকভাবে লাভবান হলেও এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্যও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় রাষ্ট্রগুলো অনেক অবদান রেখেছে। এ মুহূর্তে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় অর্থনীতির দুই দেশ যদি বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়বে। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের আঞ্চলিক বাজার ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশও ক্ষতির মুখে পড়বে। সাময়িক সময়ের জন্য বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের চাহিদা হয়তো বাড়তে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশও এর প্রভাব থেকে রেহাই পাবে না।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri