Headline :
গাজার সব সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ ও রেড ক্রসের আরেক দফা বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরি কত? শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ ‘সব প্রতিবেদন হুবহু’ প্রকাশ করায় ময়মনসিংহের ১১ সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ‘মার্চ টু সচিবালয়’ আওয়ামী লীগ লুটপাট করে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে: দুলু বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ আসছেন অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী ড. অ্যালি দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়তে প্রধান উপদেষ্টার ৬ প্রস্তাবনা

হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনাকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দেন সিমিন

Reporter Name / ৯৭ Time View
Update : সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

হত্যা, শেয়ার জালিয়াতি এবং প্রতারণার একাধিক মামলা ধামাচাপা দিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান। তৎকালীন সরকারের প্রভাব খাটিয়ে মামলা বন্ধের জন্য তিন দফা গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন সিমিন। এই উৎকোচ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে হত্যা ও শেয়ার প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনটি মামলারই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সিআইডির যৌথ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য। গণভবন থেকে প্রাপ্ত নথিপত্র এবং শেখ হাসিনার পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে এ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, গণভবনে সিমিন রহমান শেখ হাসিনাকে শেখ মুজিব জাদুঘর ট্রাস্টের জন্য ৫০ কোটি, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উন্নয়ন সংস্থা সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ২৫ কোটি এবং নগদ ২৫ কোটি টাকা প্রদান করেছিলেন। এই চেক প্রদানের সময় বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম (এস আলম) এবং একাত্তর টেলিভিশনের তৎকালীন সিইও মোজাম্মেল বাবু উপস্থিত ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সূচনা ফাউন্ডেশনের দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সূচনা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্ট নিরীক্ষা করে সেখানে সিমিন রহমানের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ২৫ কোটি টাকার চেক নগদায়নের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের ১৮ মার্চ তারিখের চেকটি ২৭ মার্চ সূচনা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে নগদায়ন হয়। এ ছাড়া শেখ মুজিব ট্রাস্টেও একই সময় জমা হয় ৫০ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি টাকা নগদে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের ১৬ জুন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের বড় ছেলে আরশাদ ওয়ালিউর রহমান রহস্যজনকভাবে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর ইউনাইটেড হাসপাতালকে চাপ প্রয়োগ করে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন বোন সিমিন রহমান। সেই অনুযায়ী তিনি মৃত্যুর সনদও জোগাড় করেন। সেখানে সিমিনের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এসকেএফ-এর কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আরশাদের মৃত্যুর পর তার বোন সিমিন রহমানের রহস্যজনক তৎপরতা কারও নজর এড়ায়নি। এ সময়ই ছোট বোন শাযরেহ হক ভাইয়ের মৃত্যুকে হত্যাকান্ড বলে অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাতের জন্যই আরশাদকে সিমিন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন।

২০২০ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়ায় নিজের বাংলোতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমান। শেষ জীবনে মেয়ে সিমিন জোর করেই তার সব কর্তৃত্ব কেড়ে নেন। মূলত লতিফুর রহমান বেঁচে থাকতেই তাঁর সব সম্পত্তি কুক্ষিগত করেন মেয়ে সিমিন। লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর সিমিন রহমান জাল সমঝোতা দলিলের মাধ্যমে ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান এবং বোন শাযরেহ হকের সম্পত্তিগুলো কুক্ষিগত করেন। আর আরশাদ রহমান যখন এটা জানতে পারেন তখন তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেন। তাঁর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের খবর পেয়ে সিমিন রহমান আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে হত্যা করেছেন বলে শাযরেহ হক অভিযোগ করেন। নানা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সিমিনের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ে নামেন ছোট বোন শাযরেহ হক। ২০২৪ সালে বোন শাযরেহ হক প্রথমে ২২ ফেব্রুয়ারি সিমিন রহমান এবং তার মা শাহনাজ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন। এ মামলা করা হয় গুলশান থানায়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পিবিআইকে। পিবিআইয়ের প্রাথমিক তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় সিমিন রহমান দেশের বাইরে ছিলেন। তার বাড়িতেও পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল। বিদেশ থেকেই তিনি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। যে কোনো মূল্যে গ্রেপ্তার এড়াতে দেনদরবার করেন। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক সমঝোতার ভিত্তিতে দেশে ফিরেই জামিন পান সিমিন। এদিকে শাযরেহ হক ২২ মার্চ গুলশান থানায় ভাইকে হত্যার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। এ হত্যা মামলায় তিনি সিমিন রহমানকে প্রধান আসামি করেন। এ ছাড়াও সিমিন রহমানের ছেলে যারাইফ আয়াত হোসেনও ওই মামলার আসামি ছিলেন। এ ছাড়া ট্রান্সকম গ্রুপের এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালের বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। এর পরপরই সিমিন রহমান সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ সময় একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবুর সঙ্গে সিমিনের দুই দফা বৈঠক হয়। মূলত বাবুই সিমিনকে গণভবনে নিয়ে যান।

৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতা গণভবনে প্রবেশ করে এবং সেই সময় গণভবন থেকে যেসব দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া গিয়েছিল তা এখন তদন্তের স্বার্থে একাট্টা করা হচ্ছে। সেসব দলিল-দস্তাবেজে ২০২৪ সালে কারা কারা গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তার মূল্যবান কিছু তালিকা পাওয়া গেছে। সেই তালিকায় দেখা যায় ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় সিমিন রহমান গণভবনে প্রবেশ করেন। একই দিনে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল বাবুও গণভবনে যান। গণভবনের এন্ট্রি লগে তাদের তিনজনের নাম পাশাপাশি পাওয়া গেছে।

একাধিক সূত্র দাবি করছে, সিমিন রহমানকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন মোজাম্মেল বাবু। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মোজাম্মেল বাবু এ ব্যবস্থা করেন। ১৫ মার্চের এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ১৮ মার্চ। ওই বৈঠকেই সিমিন রহমান দুটি চেক এবং নগদ অর্থ নিয়ে গণভবনে প্রবেশ করেন। নগদ অর্থগুলো ছিল বৈদেশিক মুদ্রায়। ডলার এবং ইউরো নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সিমিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত বছর ১৫ জুন, রাতে। ওই বৈঠকে সিমিন প্রথম আলো বিক্রির জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও চুক্তিনামা শেখ হাসিনাকে দেখান ও অনুমতি নেন।

দ্বিতীয় বৈঠকে সিমিন রহমান শেখ হাসিনার কাছে দুটি চেক হস্তান্তর করেন এবং দুটি চেকই ছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। একটি চেক ছিল শেখ মুজিব জাদুঘর ট্রাস্টের জন্য। ৫০ কোটি টাকার এ চেকটি শেখ হাসিনা জাদুঘর ট্রাস্টের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খানের (সাবেক সচিব) কাছে হস্তান্তর করেন এবং তা পরবর্তীতে নগদায়ন করা হয়। দ্বিতীয় চেকটি ছিল সূচনা ফাউন্ডেশনের। ২৫ কোটি টাকার ওই চেকটিও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এবং ২৭ মার্চ ওই চেকটি নগদায়ন করা হয়েছিল সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এ চেকের সূত্র ধরেই সূচনা ফাউন্ডেশনের অবৈধ সম্পদের উৎস অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানা গেছে, বাকি যে অর্থ দেওয়া হয়েছিল সেটি নগদে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা একটি হাতব্যাগে এ নগদ অর্থ গ্রহণ করেছিলেন। উল্লেখ্য, এই তিন দফা বৈঠকেই সিমিন রহমান হত্যা মামলা থেকে তাকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করেন এবং বিনিময়ে তিনি প্রথম আলো এস আলমের কাছে বিক্রি করে দেওয়ারও অঙ্গীকার করেন। শেষ বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি দলিলও চূড়ান্ত হয়। সেই সমঝোতা চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল বাবু স্বাক্ষর করেন। সিমিন রহমান শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন প্রথম আলো বিক্রি করে এ মামলাগুলো থেকে তাকে যেন পরিত্রাণ দেওয়া হয়। এর পরপরই ঘটে ভোজবাজির মতো নাটকীয় ঘটনা। আরশাদকে হত্যা মামলার তদন্ত স্থগিত হয়ে যায় রহস্যময় কারণে। এর আগে পুলিশ ছিল তৎপর। আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছিল। পোস্টমর্টেমও করা হয়েছিল নতুন করে। মামলা নিয়ে অনুসন্ধানের কাজও এগিয়েছিল অনেকখানি। কিন্তু হঠাৎ উচ্চমহলের নির্দেশে এ মামলার তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri