যখন কোনো স্বৈরাচারের পতন হয়, তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির বিজয় হয়। আর যখন কোনো ষড়যন্ত্র হয়, তখন বিএনপির পরাজয় হয়। নব্বইয়ের গণ আন্দোলন আর ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্র সেটাই প্রমাণ করে। সুতরাং জুলাই বিপ্লবের পর বর্তমান সময়ে বিএনপিকে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সেই সঙ্গে চোখ-কান খোলা রেখে হতে হবে সাবধান। একানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেমন ক্ষমতার ভাব চলে এসেছিল, তেমন ভাব যদি এখন বিএনপির মধ্যে আসে, তাহলে সমূহ সর্বনাশ। শহীদ জিয়ার আদর্শ আবারও ষড়যন্ত্রের কাছে ধুলায় লুটিয়ে পড়বে। বিএনপির একমাত্র সম্পদ হলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ। আর সেই জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতীক হলেন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। এর বাইরে কেউ অন্য কিছু চিন্তা করলে, দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যদি ক্ষমতার আগাম ভাব চলে আসে, তাহলে সর্বনাশ কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একজন ভাগ্যবান দেশপ্রেমিক। অত্যন্ত সাহসী, মেধাবী, সৎ এই মানুষটি নিজে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং পরে দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের নামের তালিকা অনেক দীর্ঘ। তালিকা দীর্ঘ হলেও সৌভাগ্যবান একমাত্র জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা-সংগ্রামে একজন মেজর যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন তাহলে জাতি সঠিক দিকনির্দেশনা পেত কি না তা ভেবে দেখার বিষয়। কারণ তখন কার নেতৃত্বে যুদ্ধ প্রস্তুতি চলছিল, জাতি তা জানত না। একজন মেজরের স্বাধীনতার ঘোষণাই সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের জন্মের আগাম বার্তা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। সে কারণে ইতিহাস থেকে ইচ্ছা করলেই মেজর জিয়াকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবে না।
মেজর জিয়াকে জাতি আবার ত্রাণকর্তা হিসেবে পেয়েছিল যখন তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সামরিক শাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের মন জয় করেছিলেন। দেশবাসীকে ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেই হাতে তুলে নিয়েছিলেন খাল খননের কোদাল। ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি একটি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১৯ দফা ঘোষণা করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেন। এই ১৯ দফার উদ্দেশ্য ছিল দেশের উন্নয়ন। কৃষিসহ সব সেক্টরে উৎপাদন বাড়ানো। স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। সম্পদের সুষম বণ্টন ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। তিনি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে খাল খনন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষি এবং পরিবেশে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন। সেই ১৯ দফার প্রথম দফাই ছিল দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। একজন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে তিনি দেশের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ১৯তম দফাটি ছিল, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার পূর্ণ সংরক্ষণ এবং জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুদৃঢ় করা। তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে ১৯ দফায় ঘোষিত নীতি-আদর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। সৎ মানুষ হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল সর্বজনবিদিত। তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন করার দুঃসাহস শত্রুদেরও নেই।