Headline :
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উল্লেখ থাকতে হবে হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দেন হাসিনা, তা প্রমাণিত : চিফ প্রসিকিউটর উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা গাজার সব সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ ও রেড ক্রসের আরেক দফা বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরি কত? শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ ‘সব প্রতিবেদন হুবহু’ প্রকাশ করায় ময়মনসিংহের ১১ সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ‘মার্চ টু সচিবালয়’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুক্তিযুদ্ধ

Reporter Name / ১২২ Time View
Update : সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

উনিশশো একাত্তরে বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-টেনিসে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত। সেখানে জন্মভূমির স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সংগঠনে নেমে পড়েন তিনি।

সেখানে তিনি স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন যোগাতে বাঙালিদের সংগঠিত করা ও তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসনসহ জাতিসংঘে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দৃষ্টি আর্কষণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের খবর পৌঁছে দিতে সেখানকার স্থানীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনের সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কাজটি তিনি নিয়মিত করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন যোগাতে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলের তার নিজ বাড়ি থেকে প্রকাশ করতেন ‘বাংলাদেশ নিউজলেটার’।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার ঘটনাবহুল দিনের কথা উল্লেখ করেছেন নিজের লেখা ‘গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন’ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল এবং সেসময়ে আমার দেশে ফেরার একটা পরিকল্পনা ছিল, তা বানচাল হয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের কাজে আমি সমপর্ণ করলাম। অন্যান্য সব বাঙালির মত আমার নজর ঢাকার দিকেই নিবদ্ধ ছিল। সেই ভয়ংকর দিনটিতে ঘরে ফিরে রেডিওয়েতে খবর শুনলাম পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের দমন করতে নেমে পড়েছে।’

মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় পরের দিন ২৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলে এক বাড়িতে বাঙালিদের সমবেত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস লিখেছেন, ‘ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যে প্রবাসী এক বাঙালির বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। আমাকে নিয়ে বৃহত্তর ন্যাশভিলের পূর্ব পাকিস্তানের ৬ বাঙালি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আশু কর্তব্য স্থির করাই ছিল সবার উদ্দেশ্য। সমস্ত সূত্র থেকে আমরা খবর সংগ্রহ করলাম। জানা গেল সেনাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তারা বাঙালিদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়।’

ড. ইউনূসের কথায়, ‘যতদূর সম্ভব খবর সংগ্রহ করতে শুরু করলাম। বিষাদে মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সামগ্রিক অবস্থার কোনো স্পষ্ট চিত্র আমাদের সামনে ছিল না। আর সহ্য হল না আমার। সমবেত বাঙালিদের উদ্দেশে বললাম, ‘যতটা দরকার তার বিস্তারিত বিবরণ আমরা সংগ্রহ করেছি। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। এখন আমাদের স্থির করতে হবে আমরা নতুন দেশের নাগরিত্ব গ্রহণ করলাম কি-না। আমি আমার সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই। আমি নিজেকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা দিলাম। কেউ ইচ্ছা করলে আমার সঙ্গে যোগ দিতে পারেন, যারা বাংলাদেশের সঙ্গে হাত মেলাবেন না তাঁরা আমার চোখে পাকিস্তানি, বাংলাদেশের শত্রু।’

তিনি বলেন, ‘চারিদিক নীরব। আমি যেভাবে সমর্থনের প্রশ্ন তুলেছি তাতে সবাই অবাক হয়ে গেছে। একরকম অপ্রত্যাশিত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সকলেই বাংলাদেশের পক্ষ নিল। ‘বাংলাদেশ নাগরিক সমিতি’ গঠন করে তখনই ন্যাশভিলের সংবাদপত্রে ও টেলিভিশনের সাংবাদিক সম্মেলনে সেকথা প্রচার করার প্রস্তাব দিলাম।’

বাঙালিদের সেই বৈঠকে তিনটি বিষয় তখন স্থির হয়:

১, আমরা স্থানীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের সাংবাদিক ও স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ করব এবং বাংলাদেশের স্বার্থে তাদের সমর্থন চাইবো।

২. আমরা প্রত্যেকে এক হাজার ডলার দিয়ে একটা তহবিল গঠন করব যাতে এখানকার কাজের খরচ চালিয়ে নেওয়া যায়।

৩. বাংলাদেশ স্বাধীন না হওয়া অবধি আমাদের বেতনের দশ শতাংশ আমরা ওই তহবিলে জমা দিব। প্রয়োজনে সাহয্যোর পরিমাণ বৃদ্ধি করবো।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়ে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন’-এ আরও লিখেন- ‘পরের দিন ২৭ মার্চ আমরা স্থানীয় টেলিভিশন কেন্দ্র ও দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক বৈঠক ডাকলাম। আমি ‘বাংলাদেশ নাগরিক সমিতি’র সচিব ও দলের মুখপাত্র নির্বাচিত হলাম। স্থানীয় টেলিভিশন কেন্দ্র আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে খবর পরিবেশনের সুযোগ পায় না। তারা আমাদের প্রতিবেদন উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করল। আমরা তাদের কাছে হয়ে উঠলাম তাজা আন্তর্জাতিক খবর সরবরাহকারী, যে খবরের সঙ্গে আবার স্থানীয় কিছু মানুষজন জড়িত আছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বাকি পাঁচজন সকলেই শহরের হাসপাতালের ডাক্তার। আমরা সবাই একযোগে নিজেদের এমন একটি দেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করছি, যার এখনও জন্মই হয়নি। কী রোমাঞ্চকর সংবাদ!’

তিনি লিখেছেন, ‘সংবাদপত্রের পক্ষ থেকে আমাদের সাক্ষাৎকার ছাপা হল। ছবি ছাপা হল। সেদিন বিকেলে আমরা আবার সমবেত হলাম জিল্লুরের বাড়িতে টিভিতে সন্ধ্যার খবর শোনার জন্য। আমাদের আন্দাজ ঠিক প্রমাণিত হয়েছিল-আমাদের খবর খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছিল। স্থানীয় সংবাদে আমার একটি সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার নেওয়া হল। আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল-‘টেনেসিবাসীদের জন্য আপনার কোন বার্তা আছে কি? ‘হ্যাঁ, অব্যশই আছে’-আমি উত্তর দিলাম। বললাম- ‘দয়া করে আপনাদের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের সদস্যদের অনুরোধ করে বার্তা পাঠান যাতে অবিলম্বে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা যায়। আপনাদের পাঠানো অস্ত্রশস্ত্র নির্দোষ নিরস্ত্র বাংলাদেশের নাগরিকেদের নির্বিচারে হত্যা করতে সাহায্য করছে। আপনাদের এই নির্দয় গণহত্যা বন্ধ করতে পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য আপনাদের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানান।

তিনি লিখেছেন, ২৯ মার্চ ওয়াশিংটনে বাঙালিদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে এর আগের দিন ২৮ মার্চ আমি ওয়াশিটনে পৌঁছে যাই। এরপর ২৯ মার্চ বিকেলে বিক্ষোভ দেখাবার জন্য আমরা সবাই সমবেত হলাম ক্যাপিটাল ভবনের সিড়িতে। আমার বানানো ফেস্টুন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দূর-দূরান্ত থেকে বহু বাঙালি এসেছিলেন বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ডেট্রয়েটের বাঙালিরা সমবেত হন।

অধ্যাপক ইউনূস লিখেছেন, ‘ম্যাজিকের মত কাজ হলো। ক্যাপিটাল হিলের সিঁড়িতে সে বিক্ষোভ প্রদর্শন এক ঐতিহাসিক ঘটনা। আমেরিকান আইনসভার সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলাম আমরা। সম্মিলিত সহায়ক গোষ্ঠি আমাদের অবস্থা ও দাবি সম্পর্কে অবহিত হবার জন্য সময় নিলেন। সেদিন সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। টেলিভিশনের ক্যামেরা গোটা মিছিলের ছবি তুলেছিলাম তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিল, সাংবাদিকদের কাছে দিনটি হয়ে উঠেছিল বিশেষ তাৎপর্ষপূর্ণ।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ-শামসুল বারী ও আমার ওপর ভার পড়ল ওয়াশিংটনের সব দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার। রাষ্ট্রদূত ও তাঁদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে আমাদের সমস্যা তাদের ব্যাখ্যা করা ও বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য অনুরোধ জানানো। আমাদের দু’জনের পক্ষেই সেই অভিজ্ঞতা খুব রোমাঞ্চকর হয়েছিল। একদিনে অনেকগুলো দূতাবাসে যেতাম আমরা নাগরিক কমিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি অন্যান্য বাংলাদেশিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন যোগাতে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri