themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114বিএনপির সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। দলীয় গঠনতন্ত্র এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
দলটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিএনপির ওপর হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতনসহ নানা কারণে তারা দলের জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করতে পারেননি। বর্তমানে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এখন জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে ভাবছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের সীমাহীন নির্যাতনে বিএনপি তখন স্বাভাবিক দলীয় কর্মকাণ্ড চালাতে পারেনি। তাই উদ্যোগ নেওয়ার পরও দলের জাতীয় কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। এখন রাজনীতির পরিবেশ এসেছে। তাই দলের জাতীয় কাউন্সিলও হবে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিলেই কাউন্সিল কর্মকাণ্ড শুরু হবে। কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দল আরও শক্তিশালী হবে।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রত্যেকটি বৈঠকে জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া অধিকাংশ নেতা কাউন্সিল করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। কাউন্সিলের ব্যাপারে বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনাও হয়েছে। বৈঠক থেকে কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঘোষণার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী বছরের জানুয়ারিতে দেশে ফিরতে পারেন। এরপরই জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ‘স্বৈরাচার’ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পাল্টে যায় রাজনৈতিক দৃশ্যপট। ফলে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি মুক্ত বাতাসে স্বস্তির রাজনীতি শুরু করে। দলকে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ব্যাপকহারে ত্রাণ বিতরণ; দলীয় শৃঙ্খলা ধরে রাখাসহ দলের জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে চাঙা করতে কাউন্সিলের বিকল্প নেই। এ কারণে বিএনপিসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
দায়িত্বশীলরা বলছেন, এবার কাউন্সিলে থাকছে নতুন-নতুন চমক। পরিবর্তন হবে দলের সংবিধানের কিছু ধারা-উপধারার। দীর্ঘ আট বছর পর দলের কাউন্সিলে ১৬ বছর রাজপথে থাকা নেতাদের আমলনামা অনুসারে ভাগ্য নির্ধারণ হবে। যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে-পদায়ন করে নবরূপে সাজানো হবে বিএনপিকে।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, আরপিও লঙ্ঘন করায় বিএনপি নিবন্ধন ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের নির্মম নির্যাতন মামলা হামলা ও হয়রানির কারণে জাতীয় কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় যেসব কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিগত আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তা, সাংগঠনিক অদক্ষতা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেয়েছে সেসব কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আরও কয়েকটি কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে তিন মাস মেয়াদের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে। ওই কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধীনস্থ ইউনিট কমিটি গঠন করে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলার নতুন কমিটি করবে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থায়ী কমিটির পদ ১৯টি (চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ) উপদেষ্টা কাউন্সিলের পদ ৭৩টি, ভাইস চেয়ারম্যান ৩৫টি, যুগ্ম মহাসচিব ৭টি, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক মিলে ৫৯২টি পদ রয়েছে। যেখানে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটে। কাউন্সিলের পর ৪৯৬ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে কিছু পদে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেই পদোন্নতি এবং নতুনভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানসহ নির্বাহী কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা মারা গেছেন। কেউ কেউ পদত্যাগও করেছেন। কাউকে আবার বহিষ্কারও করা হয়েছে। পদোন্নতি দিয়ে কয়েকটি পদ পূরণ করা হলেও অনেক পদ এখনো ফাঁকা। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির শুরুতেই দুটি পদ ফাঁকা ছিল। এরপর তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মারা যান। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করা হয়নি। অসুস্থ থাকায় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকসহ কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সবশেষ গত ১৬ আগস্ট দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। সেই হিসাবে এখন ৩ পদ শূন্য রয়েছে। ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে অন্তত ৯টি পদই ফাঁকা। এ ছাড়া ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির মধ্যেও বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যেও কয়েকজন মারা গেছেন। কয়েকজনকে বহিষ্কার আর কয়েকজন স্বেচ্ছায়ও পদত্যাগ করেছেন। সবমিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ১৩০টির মতো পদ এখন শূন্য। তাছাড়া বয়সের কারণেও বেশ কয়েকজন নেতা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়। দায়িত্বশীলরা বলছেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে শূন্যপদ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করা দলের হাইকমান্ডের অন্যতম লক্ষ্য। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা সংগঠনের চলমান প্রক্রিয়া। তবে জাতীয় কাউন্সিল হলে সংগঠনটি নতুন নেতৃত্ব পায়। দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকা ত্যাগী সংগ্রামী পরীক্ষিত নেতারাই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ পান। এতে ত্যাগীরা যেমন মূল্যায়িত হয়, তেমনি সংগঠনও শক্তিশালী হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দিলেই পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে।