themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের পর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এই ১৫ বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে ১৮৮ শতাংশ। এর আগে দেশে ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে চারবার। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে (সর্বনিম্ন ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ ইউনিট ব্যবহার) বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড় দশকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৪ বার। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের উৎপাদন খাতের সব পণ্যের দাম বেড়েছে, যা সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনমানের ওপর প্রভাব ফেলেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল আদায়ের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গ্রাহক শোষণ করে হরিলুট করা হয়েছে। তারা ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেন। এগুলো হচ্ছে- দেশের স্বার্থ রক্ষা না করেই ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের অসম বিদ্যুৎ চুক্তি এবং বিভিন্ন বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) আওতায় কয়েক গুণ বেশি দামে বিদ্যুতের ক্রয়চুক্তি বাস্তবায়ন করা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অভাবনীয় হারে। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতাহীন বাজার এবং খাতটির অনিয়ম-দুর্নীতি দায়ী। বিদ্যুৎ খাতে ঋণ ও দায়-দেনা মেটানোর নামে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে তা চাপানো হয়েছে ভোক্তার ওপর। এতে ভোক্তা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানই ভুক্তভোগী হয়েছে।
আদানির বিদ্যুতের দাম বেশি : দেশের কয়লাচালিত অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তুলনায় আদানি প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)-কে বাড়তি অর্থ দিতে হয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের করা বিদ্যুৎ চুক্তিটি বৈষম্য ও প্রতারণামূলক। তারা বলছেন, আদানি গ্রুপ এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এই চুক্তিতে তারা কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে।
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়তি কয়লা, ক্যাপাসিটি চার্জসহ বিভিন্ন কৌশলে বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম ধরেছে ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠী। এজন্য ভারতের ঝাড়খন্ডের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চুক্তি বাতিলের দাবিও জানিয়েছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। গত বছর থেকে আওয়ামী লীগ বাড়তি দাম দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি নিয়ে ওঠা সমালোচনা উপেক্ষা করেই বিদ্যুৎ আমদানি করে আসছিল। চলতি বছর জুনে আদানি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে কয়লার দাম ধরেছে ৮ টাকা ২২ পয়সা। এ সময় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার খরচ ৬ টাকা ২২ পয়সা। আদানি গত অর্থবছর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জ ও পরিচালন ব্যয় ধরেছে ৭ টাকার বেশি। জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়তি খরচ দেখিয়ে ২৫ বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ কোটি টাকা আদায়ের সুযোগ রয়েছে আদানির।
আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, কম দামে কয়লা ব্যবহার করে বেশি দাম আদায়, শুল্কসুবিধা পেয়েও তা প্রদর্শন না করা। এ ছাড়া তিন মাস আগে বিদ্যুতের নির্দিষ্ট চাহিদা জানানো, উৎপাদন সক্ষমতার কমপক্ষে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ কেনা, ১ শতাংশের বেশি কয়লার অপচয়সহ ক্রয় চুক্তির বিভিন্ন দুর্বলতা আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইন স্থগিত করছে। এই আইনের অধীনে আদানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তির কারিগরি ও আর্থিক দিক খতিয়ে দেখছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। আদানি কেন্দ্রের শুল্ক-করের অনিয়ম খতিয়ে দেখছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় সম্প্রতি নিজ দেশে বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ উন্মুক্ত করেছে ভারত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের এই চুক্তি বাতিলও হতে পারে। কারণ, এই চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। এতে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ পেয়েছে আদানি গ্রুপ। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছে আদানি। এতে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে। চুক্তি পর্যালোচনা করে তা বাতিল করা হতে পারে।
গত অর্থবছর আদানির কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে প্রায় ৮১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন খরচ ১ টাকা। জ্বালানি (কয়লা) খরচ প্রতি ইউনিটের জন্য ৭ টাকা ৫৪ পয়সা। অর্থাৎ আদানির বিদ্যুৎ কেনায় গড়ে ব্যয় হয়েছে ১৫ টাকা ১৪ পয়সা। চুক্তিতে অসম সুবিধার জন্য আদানির পরিচালন ব্যয় অন্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের চেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদানি ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে এই চুক্তি করেছে। এই চুক্তির ক্ষেত্রে আদানি গ্রুপ হচ্ছে ঠিকাদার। এজন্য আইনের দৃষ্টিতে আদানিকে অযোগ্য ঠিকাদার হিসেবে আমরা ঘোষণা করতে পারি। এর মাধ্যমে তাদের চুক্তি বাতিল করে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেব না। যে অর্থ দিয়ে আদানির কাছ থেকে আমরা বিদ্যুৎ নেব তার অর্ধেক পয়সায় আমরা নিজেরাই কয়লা কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। জনস্বার্থে এই চুক্তি বাতিল করে আদানি থেকে বিদ্যুৎ না কিনে দেশের অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করব।