দেশের ছয় জেলায় উৎপাদিত আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, লালশাক, শিম, শসা, পটল ও বাঁধাকপিতে মাত্রারিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে। জেলাগুলো হলো ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ। রাসায়নিকগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাডমিয়াম, লেড ও ক্রোমিয়ামসহ বেশ কয়েকটি ভারী ধাতু; যা শরীরে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
আজ সোমবার রাজধানীতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ বিষয়ক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
একই সেমিনারে দেশের আম, লিচু, পেয়ারা ও বড়ইয়ে শতকরা কী পরিমাণ কীটনাশক রয়েছে- তা নিয়ে করা গবেষণার ফলাফলও উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ৩২০টি নমুনা পরীক্ষা করে গড়ে ১০ শতাংশের মধ্যে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক পাওয়া গেছে। বাকি ৯০ শতাংশ ফলে কোনো কীটনাশক পাওয়া যায়নি।
বিএফএসএর অর্থায়নে সবজি নিয়ে গবেষণা করেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল সাইন্স বিভাগের দুই শিক্ষক অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও ড. মোহাম্মাদ গোলাম কিবরিয়া।
আর ফল নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) কীটতত্ত্ব বিভাগের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মাদ দেলওয়ার হোসেন প্রধান।
গবেষণায় ড. মোহাম্মাদ গোলাম কিবরিয়া জানান, লাল শাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। যেখানে ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা প্রতি কেজিতে ১৯০ মাইক্রো গ্রাম, সেখানে লালশাকে পাওয়া গেছে ৭০৪ দশমিক ৩২ মাইক্রো গ্রাম। বেগুনে পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে পাওয়া গেছে ২৭৫ দশমিক ৬৬ মাইক্রো গ্রাম, ঢেঁড়সে ৩৪৯ মাইক্রো গ্রাম ও টমেটোতে ১৯৫ মাইক্রো গ্রাম প্রতি কেজিতে।
এক্ষেত্রে ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ উপস্থিতি পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে সংগ্রহ করা নমুনায়। একইভাবে ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল ও লালশাকে। লেডের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢেঁড়স, পটল, টমেটো ও লালশাকসহ ৯টি সবজিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের খাদ্যচক্রে এসব ভারী ধাতুর প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান হয় না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। তবে সেজন্য নির্দিষ্ট কোনো ফসল বা খাদ্যপণ্য নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে খাদ্য উৎপাদনের উৎসে বিষ ছড়ানোর সুযোগ বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে ভারী ধাতু নিয়ন্ত্রণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার ‘নিরাপদ’ করতে হবে। আমদানি করা কীটনাশকে ভারী ধাতু যেন না থাকে এটাও নিশ্চিত করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল রাউফ মামুন বলেন, ‘এই ধরনের গবেষণা আরো বেশি করা প্রয়োজন, একই সঙ্গে গবেষণার ফলাফলের ওপর সংশ্লষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমাদের দেশের গবেষণায় খুব একটা অর্থায়ন করা হয় না। গবেষকরা একটি গবেষণায় ২০-২৫ লাখ টাকা চাইলে দেওয়া হয় ৭-৮ লাখ টাকা, যা দিয়ে গবেষণা শুরু ও শেষ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া, বিএফএসের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোয়েব, বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক ড. শামসেদ বেগম কুরাইশি, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার কেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।