ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশি-বিদেশি, প্রতিবেশী এবং অভ্যন্তরীণসহ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস ও জাস্ট নিউজের সম্পাদক এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যুক্তরাষ্ট্রের “লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস” এর উদ্যোগে ‘স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনে সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ও বর্তমান করণীয়’ শীষর্ক এক আলোচনা এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৫ সাংবাদিক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া কথা ছিল। তবে দু’টি পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত না থাকায় তিন পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেওয়া হয়। বাকি দু’টি পরিবারের কাছে পরে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাছির জামাল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস’ এর ফজলে এলাহী নওশাদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে মেহেদী হাসানের বাবা মোশাররফ হোসেন, তাহির জামান প্রিয়’র নানা শফিউল আলম, শাকিল হোসাইনের বাবা বেলায়েত হোসাইন।
মুশফিকুল ফজল বলেন, যাদের ত্যাগে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারছি। এখনো আমাদের পুরোপুরি মুক্ত ভাবলে চলবে না। কারণ আমাদের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি, প্রতিবেশী এবং অভ্যন্তরীণসহ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র চলছে বললেই হবে না, কোথায় কোথায় সমস্যা, সেটাকে বের করতে হবে। যাতে আমাদের শক্ররা বুঝতে পারে যে, আমাদের সহজে ঘায়েল করা যাবে না।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর অনেক সাংবাদিক বেকার হয়েছেন। অনেকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমি মনে করি, দীর্ঘদিন ধরে তাদের পেশায় নেই, সবাই একটা তালিকা করে- যেখানে যেখানে দোসররা আছে, আমি কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধের পক্ষে না। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে পেশাদার সাংবাদিকদের জায়গা হয়। আর দীর্ঘদিন যারা চাকরিবঞ্চিত তারা যাতে ন্যায্য পাওনা পান এবং তারা যাতে ওই দায়িত্ব নিতে পারেন। এজন্য তালিকা করে প্রয়োজনে সরকারের তথ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে কিংবা মালিকদের সরাসরি তালিকা দিতে হবে। কারণ তারা যাতে তাদের চাকরি ফেরত পায়, এটা তাদের ন্যায্য অধিকার।
এসময় বন্ধ গণমাধ্যমগুলো দ্রুত খুলে দেয়ার জন্য দাবি জানান মুশফিকুল ফজল আনসারী। পাশাপাশি তিনি বলেন, রাষ্ট্রের উচিত আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোর দায়িত্ব নেওয়া। আর সরকারি খরচে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো উচিত।
এদিকে, প্রায় এক দশক পর বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হোয়াইট হাউজ ও জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বেগম জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’তে দেখা করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়।
সাক্ষাৎ শেষে মুশফিকুল ফজল আনসারী সাংবাদিকদের বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আমি উনার সঙ্গে কাজ করতাম (খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব ছিলাম)। আমি ব্যক্তিগতভাবে উনাকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। উনি অসুস্থ্য, তারপরও উনার মনোবল অনেক শক্ত দেখতে পেয়েছি। মানুষের প্রতি যে উনার মমত্ববোধ-ভালোবাসা, সেটা আজকের আলোচনায়ও ফুটে উঠেছে। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের মানুষ তার জন্য দোয়া করবেন, তিনি সেরে উঠবেন।