দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএসের ২৬৪ জন ক্যাডার ফের বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এজন্য বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
১২ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে এক আবেদনে তারা একথা জানান। সেই আবেদন তারা বলেন, বর্তমান সরকার ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ বঞ্চিত ২৬৪ জনকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দেওয়ায় সরকারের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। দীর্ঘ ১৪ বছর কিংবা অনেক বছর পর নিয়োগ পেলেও নতুন করে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে জানান তারা।
তারা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে কিছু ধারা অস্পষ্ট রাখায় আমরা নতুন করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। প্রজ্ঞাপনে অনুচ্ছেদ-ছ সংযুক্ত করে ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগ ও ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হলেও বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতার অজুহাতে সংশ্লিষ্ট হিসাব নিরীক্ষক অফিস ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ করছে না। ফলে নিজ ব্যাচের ১৪ বছর পর চাকরিতে প্রবেশ করে তারা ১৫ বছরের জুনিয়রের সমান বেতন পাবেন। যা তাদের জন্য রীতিমতো পরিহাসের নামান্তর। এছাড়া প্রজ্ঞাপনে অস্পষ্টতার কারণে বিভাগীয় পরীক্ষা ও ঊর্ধ্বতন স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, বিষয়টি নিয়ে মহাহিসাব নিরীক্ষক অফিস, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও কোন সুরাহা পায়নি। এমতাবস্থায় তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগের আলোকে ইনক্রিমেন্টসহ ব্যাচভিত্তিক বেতন নির্ধারণে নির্দেশনা জারি করা; ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগের আলোকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে বিভাগীয় ও ঊর্ধ্বতন স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে নির্দেশনা জারি করা এবং হাইকোর্টের রায়ের আলোকে ও সাম্প্রতিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্তদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সূত্র বিবেচনা করে বকেয়া বেতনাদি সুবিধা প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা।
ক্ষোভ ব্যক্ত করে তারা বলেন, দীর্ঘদিন গত স্বৈরাচারী সরকারের বৈষম্যের শিকার হয়ে নিয়োগ বঞ্চিত থাকায় বিভিন্ন চাকরিতে যোগদান করি। যার মধ্যে অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় পদোন্নতি লাভ, ব্যাংকিং পেশায় সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার, সরকারি সংস্থায় পদোন্নতি লাভ এবং ঢাকার নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবেও পদোন্নতি পেয়েছিলাম। বর্তমান সরকারের প্রজ্ঞাপনের পর আমরা পূর্বের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাডার পদে যোগদান করেছি। প্রজ্ঞাপনে বকেয়া বেতনপ্রাপ্তি উল্লেখ না থাকলেও, ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগ থাকায় ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাচের সাথে যোগদান গণ্য হবে- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এমন আশ্বাসে চাকরিতে যোগদান করি। কিন্তু এখন শুনতেছি একেবারে নতুন ব্যাচ হিসেবে আমাদের বেতন নির্ধারণ হবে। এটা ভূতাপেক্ষনিয়োগের নামে প্রহসন। এটা সুস্পষ্ট বঞ্চনা। আমরা এই বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্তি চাই।
এজন্য বৈষম্যের শিকার ক্যাডাররা যাতে নতুন করে বৈষম্যের শিকার না হয় তাই প্রধান উপদেষ্টার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএসের ক্যাডারদের পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল জনপ্রশাসন সচিবের সাথে সাক্ষাত করেন। সেই সাক্ষাতে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন সুস্পষ্টকরণ করে বৈষম্য দূরীকরণে জনপ্রশাসন সচিব পদক্ষেপ নিবে আশ্বাস প্রদান করেন।
বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার বিসিএস ক্যাডারদের বক্তব্য হলো ২৮তম বিসিএস আর ৪২তম বিসিএস একই বেতন হয় কিভাবে? যদি সংশ্লিষ্ট ব্যাচ অনুযায়ী পে-ফিক্সশন না হয় তাহলে ভূতাপেক্ষ হয় কিভাবে? ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা হলে সিনিয়রিটি স্কেল পরীক্ষায় অংশ নিতে, বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে কেন সমস্যা থাকবে? যেখানে চাকরিরতরা ভূতাপেক্ষ নিয়োগ নিয়ে আর্থিক সুবিধাও পেল সেখানে আমরা ব্যাচভিত্তিক পে ফিক্সেশন পাব না কেন? প্রধান উপদেষ্টার সর্বশেষ ভাষণেও আমাদের বিষয়টি জনপ্রশাসনের মূল সফলতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জনপ্রশাসনের এক মাসের অর্জনে সবার ওপরে ২৮-৪২ কথা বলা হলেও আবার আমাদের সাথে বৈষম্য কেন?
গেজেটের আগে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে বকেয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল ব্যাচভিত্তিক পে ফিক্সেশন নিয়ে কোন কথা হয়নি। এখন উল্টা বা ভূল ব্যাখ্যা কেন? শেখ হাসিনার আমলে যে বৈষম্য হয়েছিল তারচেয়ে বড় বৈষম্য এখন ২৮-৪২ কে একই বেতন দেওয়া। এর অনেক নেগেটিভ প্রভাব পড়বে।