কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ায় ২৩ আগস্ট রাতে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙনে তলিয়ে যায় শত শত বাড়ি-ঘর। এতে ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয় বুড়বুড়িয়া গ্রাম। পানি কমায় মানুষ ঘর-বাড়িতে ফিরছেন। ফসলের জমি বিনষ্ট হয়েছে। মাছ ভেসে গেছে। ঘর ভেঙে গেছে। তাই অনেকে মনমরা। যেন প্রাণহীন জনপদ।
বুড়বুড়িয়া গ্রামের ফয়েজ আহমেদ বলেন, কৃষি কাজ করে তার সংসার চলে। দুই ছেলের মধ্য বড় ছেলে সাব্বির আহমেদ একাদশ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে মো. সানি ষষ্ঠ শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। স্ত্রী সালেহা বেগম গৃহিনী। রাত তখন পৌনে ১২টা। মসজিদের মাইকে বলল গোমতীর নদীর বাঁধ ভাঙা পড়ছে। বউ আর দুটো ছেলেকে নিয়ে একটা দৌড় দিলেন। দৌড়ের সময় পিছন দিক থেকে একটা ধাক্কার আওয়াজ শুনেন। এক ধাক্কায় তার ঘরটা ভেঙে নিয়ে গেছে গোমতীর পানি। ঘরের মালামাল যা ছিল সব নদীর পানির সাথে ভেসে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হাহুতাশ করছিলেন ফয়েজ আহমেদ। কিভাবে বাড়িটি পুনঃনির্মাণ করবেন হিসাব মেলাতে পারছেন না।
ফয়েজ আহমেদ জানান, তিনি কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তার আয়ের অন্য কোনো পথ নেই। সেই ভয়াল রাতের কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেন ফয়েজ।
বুড়বুড়িয়া এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গ্রামটির প্রবেশের সড়কটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। ভাঙা অংশ দিয়ে এখনো তীব্র স্রোতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সড়কের পাশের জমিতে কোথাও হাটু পানি কোথাও বুক সমান পানি। ভাঙা সড়ক দিয়ে স্থানীয়রা খুব সতর্ক হয়ে পারাপার হচ্ছেন। সড়কের যে অংশে একটু ভালো সেখানে ডুবে যাওয়া বাড়ি-ঘর থেকে আসবাবপত্র এনে পরিষ্কার করছেন আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে ফিরে আসা স্থানীয়রা। সড়কটি ধরে সামনে এগিয়ে গেলে ডান পাশে ফয়েজের বাড়ি। বাড়ির সামনে বিশাল গর্ত। দেখে মনে হবে কেউ পুকুর খননের চেষ্টা করছেন। বাড়ির উঠোনে হাটু সমান কাঁদা। বাড়ির পশ্চিমে জমিতে বুক সমান পানি। দূর থেকে ভেসে আসা একটি টিনের চালা আটকে আছে জমির আইলে।
ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ইন্দ্রাবতী গ্রামের বাসিন্দা। গোমতীর নদীর বাঁধ ভেঙে তাঁর বাড়িটি মাটির সাথে মিশে যায়। এক ছেলে দুই মেয়ের জনক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস। মেয়ে দু’টিকে বিয়ে দিয়েছেন। বছরখানেক আগে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। ছেলের বউ আর দুই নাতনী নিয়ে ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাসের পরিবার। ছেলে বিশ্বজিৎ চন্দ্র দাস ওমান থাকে। তার ভিসার মেয়াদ নেই। ওমানে এখন লুকিয়ে থাকে বিশ্বজিৎ। পরিবারের দুর্দিনে টাকা দিতে না পেরে আক্ষেপ করেন বিশ্বজিৎ।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের তালিকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করেছি। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি সংস্কার কিংবা পূর্ণাঙ্গ নির্মাণ করে দেয়ার বিষয়ে শীঘ্রই কি সিদ্ধান্ত হয়, তা জানিয়ে দেয়া হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী জানান, বুড়িচংসহ বন্যা কবলিত জেলার ১৪টি উপজেলার যে সমস্ত ঘর-বাড়ি ক্ষতি হয়েছে সেগুলোর প্রাথমিক হিসাব করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে ৮ হাজার ৬৭৪টি ঘর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১টি ঘর-বাড়ি। এই তালিকা ঢাকায় প্রেরণ করা হবে।