Headline :
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উল্লেখ থাকতে হবে হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দেন হাসিনা, তা প্রমাণিত : চিফ প্রসিকিউটর উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা গাজার সব সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ ও রেড ক্রসের আরেক দফা বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরি কত? শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ ‘সব প্রতিবেদন হুবহু’ প্রকাশ করায় ময়মনসিংহের ১১ সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ‘মার্চ টু সচিবালয়’

সংখ্যানুপাতিক ভোট প্রশ্নে বিভাজন

Reporter Name / ১৬০ Time View
Update : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

পিআর (প্রিপোরশনেট রিপ্রেজেনটেটিভ) ও বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। বিএনপিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল মনে করছে জনগণের সরাসরি ভোটে যাদের নির্বাচিত হওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের পক্ষ থেকে ছলচাতুরী করে সংসদে যাওয়ার জন্য এই সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের ধুয়া তোলা হচ্ছে। অন্যদিকে পিআর পদ্ধতিতে যারা নির্বাচন দাবি করছে তারা মনে করে গতানুগতিক সরাসরি ভোটের নির্বাচনে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব কখনোই নিশ্চিত হবে না। বিএনপি, জামায়াতসহ পিআর পদ্ধতির পক্ষ-বিপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, এই সংখ্যানুপাতিক হার (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের ঘোরবিরোধী দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ফ্যাসিস্টবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে তাদের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের মতে, যেসব দলের জনপ্রিয়তা খুবই কম এবং জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচনে পাস করে আসার সম্ভাবনা নেই, তারাই মূলত ছলচাতুরী করে সংসদে যাওয়ার জন্য এই সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের ধুয়া তুলছে। বাংলাদেশের নির্বাচন, ভোট ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যা একেবারেই অবাস্তব ও বেমানান।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা ১৭-১৮ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি। যাতে করে দেশের মানুষ তার ইচ্ছামতো নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করে সংসদে পাঠাতে পারে। কিন্তু যে নির্বাচনে একজন ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, অথচ তিনি জানবেন না যে কাকে তার মূল্যবান ভোটটা দিয়েছেন, আর তার সেই ভোটে কোন দলের কোন এলাকার কোন ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছেন-তখন সেটা কি ফেয়ার ইলেকশন হবে? প্রকৃত নির্বাচন হবে? মানুষের মাঝে যেসব দলের ন্যূনতম জনপ্রিয়তা নেই এবং যেসব দলের নেতারা জনগণের কাছে সরাসরি যেতে ভয় পান তারাই মূলত এমন অবাস্তব পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করছেন। কাজেই ৫ শতাংশ বা ৭ শতাংশ ভোটের দলের কোনো নেতা কী দাবি করলেন তাতে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ জনমানুষের কিছু আসে যায় না। তা ছাড়া আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেক আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেসব দল মাঠে ছিল এবং যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, এসব দলের নেতারা নির্বাচনে জয়ী হোন বা না হোন বিএনপি ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে তাদের সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যাতে সেই সরকারে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।’

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এ প্রসঙ্গে বলেন, পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) হতে পারে, তবে সেটিকে ঘিরে যদি কেউ দেশের জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চায়, তারা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মূল আদর্শে বিশ্বাস করে না। এরা এই পিআরের অজুহাতে নির্বাচন এবং দেশের জনগণকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা যারা বলছেন, ‘তাদের একটি উদ্দেশ্য আছে হয় জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা অথবা বাংলাদেশে নির্বাচন না হওয়া। এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ সংগ্রাম করেছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের জন্য। আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অসংখ্য জীবন হারাতে হয়েছে। এটা তাদের উদ্দেশ্য থাকতে পারে। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। নির্বাচন ও ভোটাধিকার নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রই ধোপে টিকবে না।’

এদিকে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আরও বেশ কয়টি রাজনৈতিক দল। এসব দলের সিনিয়র নেতাদের মতে, প্রচলিত নির্বাচনপদ্ধতিতে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এতে জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় না। প্রার্থিতার ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা নির্ণয় করা যায় না। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সারা দেশে লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ক্ষমতার আধিপত্য অবসানের পাশাপাশি ‘ইকুয়াল ও কোয়ালিটি’ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে বলেও তাদের ধারণা। গতানুগতিক সরাসরি ভোটের নির্বাচনে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব কখনোই নিশ্চিত হবে না।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দল ও জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লুটপাট, এলাকায় দখল, চাঁদাবাজি, ব্যক্তি নেতার অধিপত্য বিস্তার নিরসন সম্ভব নয়। তাই দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব, ভোট ডাকাতি ও সন্ত্রাসমুক্ত ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচনের স্বার্থেই এই পিআর সিস্টেমে জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যার মাধ্যমে দলের আদর্শ ও জনপ্রিয়তার প্রতিফলন ঘটবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছেন। তিনি বলেন, পুরোনো পদ্ধতির নির্বাচনে জনগণের আসল প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই পিআর পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসূফ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হয়ে থাকে। ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাস, কেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব ছাড়া কোনো নির্বাচনই হয় না। কাজেই এসবের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। যাতে করে আসনভিত্তিক ভোট কম হলেও জাতীয় সংসদে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব থাকে এবং সব দল মিলে একটি জাতীয় সরকার গড়ে দেশ পরিচালনা সম্ভব হয়।’

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনেও সংখ্যানুপাতিক হারের ভোটব্যবস্থা (পিআর পদ্ধতি) চালুর দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে জনরায় বিকৃত হয়, আর পিআর পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা, বৈচিত্র্য ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব। বাংলাদেশে এই পদ্ধতি চালু হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তৈরি হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষনেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চাই না। বিশেষ করে নিম্নকক্ষের নির্বাচনে পিআর বাস্তবতার সঙ্গে মানায় না।’

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে একদলীয় শাসনব্যবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে এবং রাষ্ট্র ও শাসনপদ্ধতিতে ভারসাম্য আনার জন্যই আমরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করছি। যাতে করে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও কোনো শঙ্কা যাতে না থাকে এবং ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও যাতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। তবে এটা যদি আপাতত নিম্নকক্ষের নির্বাচনে না-ও হয়, তাহলে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে যাতে এই পিআর পদ্ধতিটা ফলো করা হয়, সেটি অন্তত নিশ্চিত করা উচিত।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের মতে, রাষ্ট্রক্ষমতা ও শাসনপদ্ধতির ভারসাম্য ভারসাম্য আনার লক্ষ্যেই তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করছেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো স্বৈরশাসনের উৎপত্তি না ঘটে, সেটিও নিশ্চিত হবে এই পদ্ধতির নির্বাচনে।

বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য পার্লামেন্ট দরকার এবং আগামী পার্লামেন্টেই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে যাওয়া যায় কি না, তা নির্ধারণ করা উচিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri