themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114এক-এগারো ঘটেছিল ২০০৬ সালে। আর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়েছিল ২০০৮ সালে। প্রায় তিন বছরের অভিনব শাসনব্যবস্থার আতঙ্ক দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়। শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী-আমলা-কামলা থেকে শুরু করে অজপাড়াগাঁয়ের সবজি বিক্রেতাদের মধ্যেও এক-এগারোর সেই দুঃস্বপ্ন আজো টনিকের মতো কাজ করে। ফলে আওয়ামী লীগের জমানায় যদি কাউকে বলা হতো আবার এক-এগারো আসছে তবে তাদের স্বাভাবিক আহারবিহার, কাজকর্ম ইত্যাদিতে রীতিমতো কম্পন শুরু হতো। আর সেই কম্পন থামানোর জন্য সংবিধান, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ যেসব বদনজির চালু করেছিল তা প্রথমত, দলটির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে এবং দ্বিতীয়ত, পুরো জাতিকে আরেকটি এক-এগারোর পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে- যাকে অনেকেই দুই-এগারো বলে টিটকারি মারার চেষ্টা করে থাকেন।
এক-এগারো আমাদের দেশ, জাতি এবং কালের কী সর্বনাশ করেছে, তা বলার আগে এক-এগারোর প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বলা আবশ্যক। রাজনীতিবিদদের কলহবিবাদ, রাষ্ট্র পরিচালনায় অযোগ্যতা, আজীবন ক্ষমতায় থাকার লালসা, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচার, যথেচ্ছচার, ভোগবিলাস, জুয়া-ক্যাসিনো, বিকৃত রুচিবোধের উল্লম্ফন ইত্যাদি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সমাজ-রাষ্ট্র-ব্যক্তি ও পরিবারে ছড়িয়ে দেওয়ার যে ভ্রষ্টাচার স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল, তা ২০০৬ সালে এসে মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। ফলে প্রচলিত রাজনীতিকে আমজনতা অপরাজনীতি আখ্যা দিয়ে মনেপ্রাণে একটি পরিবর্তন কামনা করেছিল। এমতাবস্থায় মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সেই বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এক-এগারো যখন এলো, তখন সাধারণ মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ল।
এক-এগারোর প্রথম ধাক্কা এলো রাজনীতিবিদদের ওপর। দ্বিতীয় ধাক্কা এলো ব্যবসায়ীদের ওপর। প্রথম ধাক্কায় জনগণ কার্যত খুশি হয়েছিল। রাজনীতির চুনোপুঁটিদের ধরার পর যখন রাঘববোয়ালদের আটকানো হলো তখন জনগণ বলল সাধু! সাধু! সাধু! আর রাজনৈতিক দলের সাধারণ কর্মীরা প্রতিবাদ তো দূরের কথা উল্টো ওরে বাবাগো, ওরে মাগো বলে আর্তচিৎকার দিয়ে ভোঁ-দৌড়ে পুরো মাঠ মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনদের জন্য এমনভাবে ফাঁকা করে দিল, যা দেখে এক-এগারোর কুশীলবরা ভারি মজা পেয়ে গেল। তারা রাজনীতিবিদদের চরিত্রহননের জন্য নিত্যনতুন নাটক মঞ্চস্থ করল এবং সীমার বাইরে গিয়ে জুলুম-অত্যাচার শুরু করল। ফলে সারা দেশে নজিরবিহীন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ রাজনীতির কথা ভুলে ইয়া নফ্সি! ইয়া নফ্সি! শুরু করে দিল।স্বেচ্ছাচার
মানুষের মধ্যে পরস্পরবিরোধী দুটো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অত্যাচারী সম্প্রদায় মানুষকে ভয় দেখাতে পছন্দ করে এবং এটাকে তারা একসময় জীবনের সবচেয়ে উপভোগী বিনোদনে পরিণত করে নেয়। মানুষ হত্যা, মানুষের কান্না, রক্তপাত এবং মানুষের সঙ্গে হিংস্র প্রাণীদের যুদ্ধ করতে বাধ্য করার মাধ্যমে পৃথিবীর রাজাবাদশারা যে কী পাশবিক আনন্দ পেতেন, তা আমরা রোমান সাম্রাজ্যের সেই গ্ল্যাডিয়েটর উপাখ্যানের মাধ্যমে জানতে পারি। রোমান সাম্রাজ্য ছাড়াও পৃথিবীর নানা প্রান্তে সেই অনাদিকাল থেকে আজকের দিন অবধি গ্ল্যাডিয়েটরের মতো ঘটনা স্থান-কাল-পাত্রভেদে খোলস পাল্টে যেভাবে মঞ্চস্থ হয়, তা ২০০৬-২০০৮ সালের বাংলাদেশে নিদারুণভাবে মঞ্চস্থ হচ্ছিল। ফলে ভয় প্রদর্শনকারীদের আনন্দ-ফুর্তির কোনো সীমা-পরিসীমা ছিল না। তাদের মধ্যে কয়েকজন তো সুলতান সুলেমানের আদলে শাহি হেরেমখানা খুলে বসেছিল।
যারা ভয় দেখায় এবং ভয় দেখানোর মাধ্যমে যে বিনোদন পায় তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জুলুমের সমাজ ও রাষ্ট্রে একধরনের মানুষ তৈরি হয়ে যায়; যারা ভয় পাওয়াকে বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে মনে করতে থাকে। এটা বলা যাবে না, ওটা করা যাবে না, ওদিকে যেও না, এদিকে বসো না, ওমুকের দিকে তাকিও না, তমুকের নাম মনের মধ্যেও স্থান দিও না- এমনতর হাজারো বিধিনিষেধ একদল মানুষ নিজেদের মনমস্তিষ্কে পয়দা করে দৈনিক কয়েকবার থরথর কাঁপতে না পারলে তাদের পেটের ভাত হজম হয় না। ফলে অত্যাচারী গোষ্ঠী ভীতু সম্প্রদায়ের ভাবসাব দেখে মনের আনন্দে অত্যাচারের মাত্রা বাড়াতে থাকে।
উল্লেখিত রসায়ন দ্বারা কামাসক্ত হয়ে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন গংরা রাজনীতিবিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে। তারপর দিনের আলোতে একদল ব্যবসায়ীকে অত্যাচার, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হানা এবং অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমার জালে ফাঁসিয়ে পুরো অর্থনীতিতে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। দিনের আলোতে যেমন তারা জুলুম-অত্যাচার চালাত, তদ্রƒপ রাতের আঁধারে বন্ধুত্ব ও সমঝোতার বিনিময়ে বিশাল অঙ্কের ঘুষের পয়গাম নিয়ে হাসিমাখা মুখে যমদূতের আতঙ্ক নিয়ে হাজির হতো। ফলে পুরো বাংলার ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্পকারখানার উৎপাদন প্রথমে থমকে যায়; তারপর উল্টো দিকে ঘুরতে থাকে।
এক-এগারোর কুশীলবদের সীমাহীন লোভের কারণে তাদের বুদ্ধি হাঁটু থেকে ক্রমশ গোড়ালির দিকে নামতে থাকে। ফলে তারা বড় বড় ব্যবসায়ীকে টার্গেট করার পর দেশের জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। অবৈধ দখল-উচ্ছেদের নামে সারা দেশে যে তাণ্ডব চালায় তার ফলে দেশের অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে বুঝতে পারে কী সর্বনাশ তারা ঘটিয়ে ফেলেছে। তারপর নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য দেশিবিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা এবং নিজেদের নিরাপদ প্রস্থানের ব্যবস্থা করে। এক-এগারো আমাদের জাতীয় জীবনে মারাত্মক সর্বনাশ ঘটিয়ে দেয়। সেই জমানার কুশীলবদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল না। ফলে মানুষের রাজনৈতিক আশা-আকাক্সক্ষা অনুধাবন করা তাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল।
দ্বিতীয়ত, তারা কর্মজীবনে সততা-দক্ষতা এবং সফলতার মাপকাঠিতে উল্লেখযোগ্য ছিলেন না। অথচ তাদের চেয়ে বহুগুণ যোগ্যতাসম্পন্ন এবং সফল মানুষদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। ফলে যোগ্যতা-অভিজ্ঞতার পরিবর্তে ভয় প্রদর্শন এবং অত্যাচারকে নিজেদের হাতিয়ার বানিয়ে তারা নিজেদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছার চেষ্টা করেছিলেন এবং শেষ পর্যায়ে বিপুল বিক্রমে বিজয়ী হয়ে পালিয়ে প্রাণরক্ষা করেছিলেন।