দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত ভয়াবহভাবে উত্তপ্ত। গত কয়েক বছরের উত্তেজনা ও পারস্পরিক অবিশ্বাস এবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এরইমধ্যে দুই পক্ষের দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) আফগান রাজধানী কাবুলে দুটি বিস্ফোরণ ও সীমান্তবর্তী পাকতিকা প্রদেশের একটি বাজারে আরেকটি বিস্ফোরণের পর পরিস্থিতি হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আফগান সরকারের অভিযোগ, পাকিস্তান তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।
যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেনি। তারা জানায়, আফগান মাটিতে সক্রিয় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর কার্যক্রম দমন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ইসলামাবাদ টিটিপি নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। যিনি কাবুলে একটি গাড়িতে ভ্রমণ করছিলেন। তবে আল জাজিরা জানিয়েছে, মেহসুদ নিহত হয়েছেন কি না, তা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
একসময় পাকিস্তান ও তালেবান ছিল ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু এখন সম্পর্ক একেবারেই ভিন্ন চিত্র ধারণ করেছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার টিটিপি যোদ্ধাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। যারা পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালিয়ে আসছে বহু বছর ধরে।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসেই পাকিস্তানে ২,৪১৪ জন নিহত হয়েছেন জঙ্গি হামলায়। যার বেশিরভাগই চালিয়েছে টিটিপি।
দুই দেশের বিবাদের মূল শিকড় রয়েছে ডুরান্ড লাইনে। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশদের নির্ধারিত এই সীমান্ত পাকিস্তান স্বীকৃতি দিলেও আফগানিস্তান কখনোই তা মেনে নেয়নি। তালেবান সরকারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই গত বছর বলেছিলেন, আমরা কখনোই ডুরান্ড লাইন স্বীকার করব না। আজকের অর্ধেক আফগানিস্তানই ওই লাইনের ওপারে পড়ে আছে।
শনিবার রাতে সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ সংঘর্ষে ২৩ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর। আহত হয়েছেন আরও ২৯ জন। পাকিস্তানের দাবি, পাল্টা হামলায় দুই শতাধিক তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, প্রতিশোধমূলক হামলায় অন্তত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে।
এদিকে, ভারতে সফররত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছি, তাই আপাতত সংঘর্ষে বিরতি দিয়েছি। কাতার ও সৌদি আরব আমাদের অনুরোধ করেছে শান্তি বজায় রাখতে। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, যদি পাকিস্তান শান্তি না চায়, তবে আফগানিস্তানেরও বিকল্প ব্যবস্থা আছে।
বর্তমানে উভয় দেশ একে অপরকে দোষারোপ করছে এবং সীমান্তের দুই পাশে সেনা ও ভারী অস্ত্র জড়ো করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ডুরান্ড লাইন, টিটিপি আশ্রয় ও রাজনৈতিক অবিশ্বাস; এই তিন উপাদানই বর্তমান সংঘাতের মূল কারণ।
যদি পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে এই সংঘাত পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।