জাকসুতে ভোট কেলেঙ্কারি

Reporter Name / ৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে মোট ভোট প্রদানের হার প্রায় ৬৭ শতাংশ বলে জাকসু নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা কার্যক্রম চলছিল। নির্বাচনে ভোট কেলেঙ্কারির অভিযোগ তোলেন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী এবং শিক্ষকরাও। প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা এবং ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছে ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল। ভোট বর্জনকারী অন্য প্যানেলগুলো হলো- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সমর্থিত প্যানেল- সংশপ্তক পর্ষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত প্যানেল- সম্প্রীতির ঐক্য, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। একই অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন কমিশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষকও।

পাঁচ প্যানেল ও তিন শিক্ষকের ভোট বর্জন : নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিকাল পৌনে ৪টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রথম ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। ভোট গ্রহণে নয়টি বিষয়ে অসংগতি উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন বরাবর অভিযোগ জানান তারা। অভিযোগ গুলো হলো- যথাসময়ে ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি; প্রার্থীদের ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেওয়া হয়নি; ভোট চলাকালে শিবিরের প্যানেলের লিফলেট বিতরণের ফলে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে; বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে জাল ভোট ও ভিপি প্রার্থীকে হেনস্তা; কিছু কেন্দ্রে ভোট কারচুপি; কিছু কেন্দ্রের ভোটার অনুপাতে বুথের সংখ্যা কম হওয়ায় ভোটারদের ভোগান্তি; অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে অমোছনীয় কালি ব্যবহার না করায় একই ব্যক্তির একাধিক ভোট প্রদান; ভোটার তালিকায় প্রার্থীদের ছবি না থাকায় একজনের ভোট আরেকজন দিয়েছেন এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদে তিনজন কার্যকরী সদস্যকে ভোট দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যালটে একজনের নাম উল্লেখ ছিল।

এরপর বিকাল সাড়ে চারটায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন নির্বাচন কমিশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক। এ সময় তারা নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন। এই শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও নাহরিন ইসলাম খান। এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম কেৃন্দ্রীয়ভাবে জাকসু নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। বাকি দুজন হলের মনিটরিং করছিলেন।

সবশেষ সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চার প্যানেল। এ সময় তারা পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান। এসব প্যানেলের মধ্যে রয়েছে সম্প্রীতির ঐক্য, সংশপ্তক পর্ষদ, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। এ সময় দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় : দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরম অব্যবস্থাপনার কারণে অভিযোগের পাহাড় তৈরি হয় জাকসুর নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। শুরুটা হয় পোলিং এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে। ভোট গ্রহণ শুরুর আগ মুহূর্তে পোলিং এজেন্ট রাখার সিদ্ধান্ত জানায় কমিশন। শেষ মুহূর্তের এমন সিদ্ধান্তে পোলিং এজেন্ট জোগাড় করা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন প্রার্থীরা। এরপরও প্রার্থীরা অভিযোগ করেন কয়েকটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ভোটার তালিকায় শিক্ষার্থীদের ছবি না থাকায় প্রশ্ন ওঠে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে। ভোটারের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে চরম বিতর্কের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। ফজিলাতুন নেছা হল কেন্দ্রে প্রথম তিন ঘণ্টায় অমোচনীয় কালি ছাড়াই চলে ভোট গ্রহণ। এ ঘটনায় ছাত্রীরা প্রতিবাদ জানালে এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে ভোট গ্রহণ। এ ছাড়া ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা তাজউদ্দীন আহমদ হল কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফলে এ কেন্দ্রটিতেও এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিল। এসব অব্যবস্থাপনার ফলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করার পাশাপাশি একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি ভোট কারচুপির অভিযোগ করে ছাত্রদল, শিবির ও বাগছাস সমর্থিত প্যানেল। অভিযোগের শুরু করেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টায় মওলানা ভাসানী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান অভিযোগ করেন, ভোট কারচুপির উদ্দেশে ব্যালট পেপার ও ভোট গণনার ওএমআর মেশিন এক জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করা হয়েছে। একই অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ঐক্য ফ্রন্ট প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম।

এ অভিযোগের জবাবে দুপুর আড়াইটায় জাকসুর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. আরিফ উল্লাহ বলেন, ব্যালট পেপার ও ওএমআর শিট জামায়াতঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বিএনপির একজন সমর্থকের প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এইচআরসফট বিডি কোম্পানির প্রধান রনি একজন বিএনপি সমর্থক। তার ফেসবুক প্রোফাইলে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও অন্যান্য বিএনপি নেতার ছবি আছে। অথচ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে।

ওএমআর মেশিনে নয়, হাতে ভোট গণনা : ওএমআর মেশিনের বদলে হাতে ভোট গণনা করে জাকসু নির্বাচন কমিশন। ওএমআর মেশিন নিয়ে একাধিক প্যানেলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri