themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121নারীর ক্ষমতায়নে কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ ছিল বিশ্বে রোল মডেল। অথচ দেশে এখন আশঙ্কাজনকভাবে কমছে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা। শিল্প কারখানা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক খাত, এমনকি প্রবাসেও কমছে কর্মজীবী নারীদের অংশগ্রহণ। প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাবে শুরুতেই ভেঙে যাচ্ছে অনেক নারী উদ্যোক্তার স্বপ্ন। বিশেষজ্ঞদের মত, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে নারী ক্ষমতায়নের যে কৃতিত্ব ছিল তা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কমেছে। অন্যদিকে, বেড়ে গেছে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নারীর সংখ্যা। ২০২৩ সালে ২ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার নারী কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। ২০২৪ সালে তা কমে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার থেকে বেড়ে ৩ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার হয়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কমেছে। আর শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নারীর সংখ্যা বেড়েছে। বিবিএসের জরিপ বলছে, দেশে এখন ৮ লাখ ৩০ হাজার নারী বেকার।
চলতি বছরের মে মাসে ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় প্রকাশিত ‘জেন্ডারভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রায় ২১ লাখ লোক কাজ হারিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখই নারী। এই বিপুলসংখ্যক নারীর চাকরি হারানোর ঘটনা মোট চাকরি হারানোর প্রায় ৮৫ শতাংশ। বর্তমানে মাত্র ১৯ শতাংশ নারী শ্রমের সঙ্গে যুক্ত। এর বাইরে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির সব প্রকল্পে ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা স্টপ-ওয়ার্ক-অর্ডারের ফলে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির ৫৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৫টি বন্ধ হয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন সহায়তা হারিয়েছে, অন্যদিকে এসব প্রকল্পে কর্মরত নারীরা চাকরি হারিয়েছেন।
বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ পদ, বিভিন্ন খাতভিত্তিক পেশায় দক্ষ শ্রমিক, গবেষক এবং সৃজনশীল কাজে নারীর উপস্থিতি এখনো হাতে গোনা। এখনো কৃষিজ, বনজ ও মৎস্যকর্মী হিসেবে নারীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করছেন। নারীরা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিলেও বাস্তবে তা খুব বেশি কাজে লাগছে না। নারীদের মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জেনিয়ারিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন হাতে গোনা। একই অবস্থা ড্রাইভিং ও মোটর মেকানিক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও। স্বাস্থ্য ও প্যারামেডিকেল সেবায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী। এ ছাড়াও ক্রাফটিং, পাইপ ফিটিং, ওয়েল্ডিং, বিউটিফিকেশন, ক্যাটারিং ও হোটেল রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ অবকাঠামোর কাজ, ফার্নিচার নির্মাণের কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলের নারীরা। কিন্তু এর মধ্যে কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজ, স্বাস্থ্যসেবা, বিউটিফিকেশনের কাজ ছাড়া অন্য কাজে নারীদের অংশগ্রহণের হার খুবই নগণ্য। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কেবল শিক্ষিকা, নার্স ও অফিসে অভ্যর্থনা কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
প্রবাসে কমছে নারী শ্রমিক : বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকদের সংখ্যা ক্রমে কমছে। কভিড সংক্রমণের পর থেকে বাংলাদেশের নারীদের বিদেশ যাত্রার হার গত তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর তথ্যে, ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, লেবানন ও জর্ডানে কোথাও অর্ধেকের কম আবার কোথাও চার ভাগের এক ভাগও নারী শ্রমিক কাজ করতে যায়নি। রিত্রুটিং এজেন্সির দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব এখন দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে নারী শ্রমিক নিচ্ছে। আবার নারী শ্রমিকদের ওপর হওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণেও নারী শ্রমিকরা এখন সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।
আগ্রহ কমেছে তৈরি পোশাক খাতে : বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতেও নারী শ্রমিকের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। এক সময়ে পোশাক খাতে মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী। গ্রাম থেকে আসা কিশোরী ও তরুণীদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই ঢাকায় এসে পোশাক কারখানায় কম মজুরিতে কাজ করতেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও জীবন চালাতে হিমশিম খাওয়ায় পোশাক কারখানার চাকরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন নারীরা।
ইউএসএআইডির উইমেন থ্রাইভ ইন বাংলাদেশ প্রকল্প আয়োজিত ‘তৈরি পোশাক খাতে নারীদের টেকসই ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় জানানো হয়, তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার ৫৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। মূলত কম মজুরি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি চালানোয় দক্ষতার অভাব, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও নিপীড়ন, সন্তান লালন-পালন, গৃহস্থালি কাজের চাপ সামলাতে গিয়ে এ খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা দিনদিন কমছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. অতনু রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একসময় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক বেশি হলেও এখন বিষয়টি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। শিল্পখাতের পাওয়া তথ্যে, পোশাক উৎপাদন খাতে নারীদের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে কমেছে। সম্প্রতি মার্কিন যুুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ ইস্যুটিও নতুন করে আশঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীদের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসলে শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সার্বিকভাবে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের যে কৃতিত্ব ছিল তা কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তায় পড়বে।