themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121মন্দ মানুষের হালহকিকত এবং পরিণতি জানার আগে আপনার অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত মন্দ লোক কারা এবং আপনি নিজে কোন প্রকৃতির মানুষ। আপনি যদি নিজেকে চিনতে না পারেন, তবে আপনার পক্ষে নির্ভুলভাবে ভালো কিংবা মন্দ মানুষ চেনা একেবারেই অসম্ভব। এ কারণে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা মানবমণ্ডলীকে সবার আগে নিজের প্রতি, নিজের কর্ম, পরিবার-পরিজন এবং আশপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রতি নজর দিতে বলেছেন। মহামতি সক্রেটিস বলেছেন, নিজেকে চেনো। কনফুসিয়াস বলেছেন, অন্যের বাড়ির দরজায় বরফ জমেছে সেটা পরিষ্কার করতে যাওয়ার আগে নিজের দরজার সামনে পড়ে থাকা খড়কুটোটি সরিয়ে ফেল।
আপনি যদি সক্রেটিস মহোদয়কে ২০২৫ সালে কাছে পেতেন এবং জিজ্ঞাসার সুরে বলতেন মহাত্মন! আমি তো নিজেকে জানতে চাই। কিন্তু কী রূপে জানব! নিজের কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে জানার কাজটি শুরু করব। আমি কি আমার চেহারাসুরত, বংশমর্যাদা এবং শিক্ষাদীক্ষার ভিত্তিতে নিজেকে মূল্যায়ন করব নাকি আমার কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা, পোশাকপরিচ্ছদ, আহার-বিহার, রাগ-অনুরাগ ইত্যাদির নিরিখে নিজেকে মূল্যায়ন করব। অথবা আপনি হয়তো ভালোমন্দ নিরূপণ এবং নিজেকে জানার মানদণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারতেন। আপনার প্রশ্ন শুনে মহামতি সক্রেটিস কী জবাব দিতেন, তা আমি বলতে পারব না। তবে আপনি যদি প্রশ্নটি আমাকে করেন তবে আমি আপনাকে হজরত আলী (রা.)-এর একটি অমিয়বাণী পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানাব।
হজরত আলী (রা.) বলেছেন, তোমার হৃদয়টি কেমন অর্থাৎ তুমি কেমন মানুষ তা বোঝার জন্য তুমি যা কর তা নয় বরং তোমার মন যা করতে চায় সেদিকে লক্ষ কর। হজরত আলী (রা.)-এর বংশমর্যাদাবক্তব্যটি পর্যালোচনা করলে নিজেকে চেনার একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা সম্ভব। আমাদের সমাজে আমরা সাধারণত মানুষের কাজকর্ম দেখেই লোকটি সম্পর্কে ভালো কিংবা মন্দ সার্টিফিকেট দিয়ে দিই। কিন্তু আমরা একবারও ভাবি না যে একজন ভালো মানুষ যেমন মন্দ কাজ করতে পারে, তেমনি মন্দ প্রকৃতির মানুষও অহরহ ভালো কাজ করে বেড়ায়। মূলত পরিবেশের চাপ এবং নিজের লাভক্ষতি ও স্বার্থ দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। নীতি, আদর্শ ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে অনবরত কাজ করতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা দুনিয়াতে বিরল। অনেকে ভালো কাজ করে নেহাত লোক দেখানোর জন্য। অনেকে করে খ্যাতি, যশ ও সম্মান লাভের জন্য। অনেকে করে অমরত্ব লাভ এবং পুণ্য অর্জনের জন্য। কেউবা করে থাকে অনুরোধের ঢেঁকি গেলার প্রবাদের ফাঁদে পড়ে।
মানুষের মন্দ কাজেরও নানা ফিরিস্তি রয়েছে। মন্দ উদ্দেশ্য সাধন, অন্যের অনিষ্ঠ এবং বিধাতার নাফরমানির মাধ্যমে নিজের মন্দত্ব জাহির করার জন্য মন্দ কাজ করে বেড়ায় এমন লোকের সংখ্যা খুব অল্প। বেশির ভাগ লোক মন্দ কাজ করে নিজের স্বার্থটিকে খুব সহজে হাসিল করার জন্য। কেউ করে লাভের জন্য, অনেকে করে লোভের জন্য। অন্যকে ভয় দেখানো অথবা নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্যও অনেকে মন্দ কাজ করে থাকে। পরিস্থিতির ফাঁদে পড়ে অথবা অজ্ঞতাবশত কিংবা নেহাত সঙ্গদোষের কারণে মন্দ কর্মকারীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। কাজেই মন্দ কাজের জন্য একতরফাভাবে কাউকে মন্দ লোক বিবেচনা করা প্রায়ই ভুল বলে বিবেচিত হয়।
এবার কর্ম বাদ দিয়ে মন নিয়ে কিছু বলা যাক। মানুষের মন একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং দুনিয়ার সবচেয়ে জটিল একটি বিষয়। খুব বেশি মেধাবী, জ্ঞানী এবং আল্লাহর বিশেষ হেদায়েতপ্রাপ্ত বান্দা না হলে মনের যন্ত্রণা থেকে কেউ রক্ষা পায় না। মনকে বশে রাখতে না পারলে মানুষের জীবনে যে সর্বনাশ ঘটে তার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। মানুষের মন, মানুষের আত্মা এবং নফস নিয়ে সেই আদিকাল থেকে গবেষণা চলে আসছে। কেউ কেউ বলছেন মন, আত্মা এবং নফস মূলত একই জিনিস। অনেকে বলছেন, ওগুলো সব আলাদা বিষয় এবং প্রত্যেকটিরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনকরা সারা জীবন তন্ন তন্ন করে মানবদেহের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সর্বত্র মন খুঁজে বেড়িয়ে শেষ অবদি কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। কবি-সাহিত্যিক এবং মরমী সাধকরা বলেছেন, মন হলো বুকের ভিতরে ঠিক যেন কলিজাটার মধ্যিখানে! মনের অবস্থান সম্পর্কে আমরা কেউ কিছু বলতে না পারলেও মনোবিজ্ঞানীরা কিন্তু পুরো মানব শরীরের প্রতিটি ইঞ্চি স্থানকে মন বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মানুষের মনের ব্যাপ্তি কেবল দেহের মধ্যে সীমিত নয়, তার দৃষ্টি, তার ঘ্রাণশক্তি, তার অনুভূতি এবং তার চিন্তার সর্বশেষ সীমানা পর্যন্ত মনের বিস্তৃতি বিদ্যমান। মনের কোনো কাল নেই। অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ-এই তিনকালেই মন সমানতালে কর্মক্ষম। পৃথিবীতে মানুষের মস্তিষ্কজাত কর্মের তুলনায় মনের মাধুরী মিশ্রিত কর্মাদি অমরত্ব পেয়েছে। কবির কবিতা, শিল্পীর শিল্পকর্ম, চিন্তাশীল ব্যক্তিদের কল্পনা এবং সাধকের মনের দুর্বার গতির কারণে চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আকাশ-পাতাল, পাহাড়-সমুদ্র জয় করা মানুষের জন্য সহজতর হয়েছে। প্রেমের ক্ষেত্রেও মনের জয়জয়কারের সঙ্গে কর্ম বারবার মার খায়। প্রেমিকার জন্য প্রাসাদ নির্মাণের তুলনায় তাকে চাঁদের আলো, রংধনুর রং, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদির স্বপ্ন-সংবলিত একখানি কবিতা রচনা করে