Headline :
আসামিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ইমিগ্রেশনে তথ্য পাঠিয়েছে পুলিশ রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাসপোর্ট ফি কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার : আসিফ নজরুল দেশের ভেতরে নাশকতায় শেখ হাসিনার পরিকল্পনা কাজ করছে : গয়েশ্বর ওমরাহ যাত্রীদের নতুন নিয়ম : রিটার্ন টিকিট ক্রয় বাধ্যতামূলক ‘এনসিপির সঙ্গে এখনই জোট গঠন বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না, অপেক্ষা করতে হবে’ ইপসুইচে কয়ছর এম আহমদের পক্ষে প্রবাসী জনসমর্থন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। জগন্নাথপুর স্বরূপ চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত । প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ

বাবুরাম সাপুড়ে, রাজনীতির কাপুড়ে!

Reporter Name / ৬৮ Time View
Update : রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

রাজনীতির কাপুড়ে বাবুদের নিয়ে লিখতে গিয়ে সুকুমার রায়ের অমর শিশুতোষ কবিতা বাবুরাম সাপুড়ের কথা মনের পর্দায় ভেসে উঠল। আমার বয়সি লোকজন যারা শৈশবে কবিতাটি পড়েছেন তারা হাল আমলে সেই কবিতা নিয়ে কী ভাবছেন তা বলতে পারব না। কিন্তু আমার মনে শৈশবের অনেক কবিতার মতো বাবুরাম সাপুড়ে কবিতাটি নানা বর্ণে, রঙে এবং বিচিত্র ভাবার্থে বারবার মনের জানালায় উঁকি দেয়, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের মানবিক আচরণ-অমানবিক দাম্ভিকতা-কাপুরুষতা, কল্পনার ফানুস, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে আমি কীভাবে কবিতাটির খপ্পরে পড়ি সেই কথাই আজ আপনাদের বলব। কিন্তু তার আগে শিরোনামের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে আলোচনা আবশ্যক।

বাংলা ব্যাকরণে কাপুড়ে বাবু নামক একটি বাগধারা রয়েছে, তার অর্থ ভণ্ড। কিন্তু অন্য ভণ্ডদের তুলনায় কাপুড়ে বাবু প্রকৃতির ভণ্ডদের যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে, তা খুঁজতে গিয়ে আমি রীতিমতো অবাক। বিশ্ব পাঠশালায় আমি যে কত বড় শিশু এবং আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছু রয়েছে, যা এখনো জানা হয়নি, এমনকি কেউ বলেওনি তার একটি নমুনা কাপুড়ে বাবু বাগধারার মধ্যে পেয়ে গেলাম। পৃথিবীতে দর্শনশাস্ত্র এবং যুক্তিবিদ্যার গুরুত্ব যে বিজ্ঞানের সব শাখার ঊর্ধ্বে তা আবার নতুন করে অনুভব করলাম। কারণ আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছু রয়েছে, যা নিয়ে চিন্তা না করলে আপনার কাছে কোনো দিন প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হবে না। কাপুড়ে বাবু অর্থাৎ ভণ্ড নামক শব্দটি নিয়ে যদি চিন্তা না করেন তবে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মনে যদি প্রশ্ন জাগে, ব্যাকরণবিদরা কেন ভণ্ড শব্দটি সরাসরি ব্যবহার না করে কাপুড়ে বাবু শব্দটি ব্যবহার করলেন!

দার্শনিকদের মতে, ভণ্ড একটা চাঁচাছোলা সাধারণ শব্দ, যা অহরহ উচ্চারিত হয়। ভণ্ড যদি দুর্বল-অসহায় হয় তবে ভুক্তভোগী অথবা ভণ্ডামিতে অতিষ্ঠ লোকজন খুব সহজে ভণ্ডের মুখের ওপর বলে দিতে পারে তুই ভণ্ড অথবা ভণ্ডামি বন্ধ কর। কিন্তু ভণ্ডের গায়ে যদি রাজকীয় পোশাক থাকে, ভণ্ড যদি রাজা হন অথবা রাজার আজ্ঞাবহ উর্দিধারী অর্থাৎ পোশাকধারী কোতোয়াল অথবা ফৌজি হন তবে ঘাড়ের ওপর কল্লা রেখে ভণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে তুই ভণ্ড বলার মতো মানুষ কেবল গল্প-উপন্যাসেই সম্ভব। সুতরাং ক্ষমতাধর ভণ্ডদের টিটকারী করার জন্যই ভাষাবিদরা কাপুড়ে বাবু বাগধারাটির প্রচলন করেছেন।

বিশাল পার্থক্যক্ষমতার সব স্তরের মতো রাজনীতিতেও কাপুড়ে বাবুদের দাপট সব সময়ই ছিল, আছে এবং থাকবে। আমাদের দেশে রাজনীতির কাপুড়ে বাবুদের নিয়ে আলোচনা করব বটে কিন্তু তার আগে বাবুরাম সাপুড়ে কবিতা এবং সেই কবিতার সঙ্গে রাজনীতির কাপুড়ে বাবুদের কী সম্পর্ক তা নিয়ে প্রাক-আলোচনা জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে নীরবের সরব চাঁদাবাজি অর্থাৎ অতীতে যেসব চাঁদাবাজি নীরবে হতো তা হঠাৎ করে যেভাবে সরবে হচ্ছে এবং সেসব চাঁদাবাজি নিয়ে কাপুড়ে বাবুদের নানারকম আকুতিমিনতি দেখে সুকুমার রায়ের কবিতার কথা মনে পড়ে গেল। রাজনীতির কাপুড়ে বাবুদের ভণ্ডামির কারণে জনগণের জানমাল-ইজ্জতের যে বেহাল তার সঙ্গে সুকুমার রায়ের কবিতার কী সম্পর্ক তা অনুধাবনের জন্য শিশুতোষ কবিতাটির ভাবার্থ আপনাদের সামনে পেশ করছি।

বাবুরাম সাপুড়ে কবিতার নায়ক একজন অবোধ বালক। বালকটি দুরন্ত নয়। তার সাহসশক্তির কোনো পরিচয় কবিতার মধ্যে নেই। তবে সে দুর্বোধ্য স্বপ্নবিলাসী এক বালক যে কল্পনার জাদুকরি কিছু খেলাধুলা করতে আগ্রহী। আবহমান বাংলার ফণা তোলা বিষধর গোখরা সাপ নিয়ে ছেলে-বুড়ো সবারই এক ধরনের স্বপ্ন, ভয়, আতঙ্ক এবং ভালোবাসা কাজ করে। বালক-বালিকারা সাপ খেলা দেখতে পছন্দ করে। অনেকের মনে সাপুড়ে হওয়ার বাসনা জাগে। বাঁশি বাজিয়ে গোখরা সাপকে নাচাতে কী কী মন্ত্র শেখা দরকার তা শেখার জন্য অনেক বালক-বালিকা সাপুড়েদের সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করে।

সাপ নিয়ে উল্লিখিত আগ্রহের পাশাপাশি বালকদের আতঙ্কও কম নয়। অনেকে সাপের কামড় থেকে বাঁচার জন্য তাবিজ পরিধান করে। অনেকে দোয়াদরুদ, ঝাড়ফুঁক করে শরীর বন্ধ করার কলাকৌশল শেখে। অনেকে আবার কামরূপ কামাখ্যা গিয়ে সর্পবিদ্যা অর্জন করে সর্পরাজ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। বাবুরাম সাপুড়ে কবিতার বালকের আকুতি দেখে মনে হয় সে সাপ নিয়ে খেলতে চায় এবং প্রতিপক্ষকে সাপ দিয়ে ভয় দেখিয়ে মজা লুটতে চায়। সেজন্য বালকটি এমন দুটো সাপ এনে দেওয়ার জন্য সাপুড়ের কাছে আবদার করে, যে সাপের কোনো চোখ নেই, শিং নেই, নখ নেই, কাউকে কামড় দেয় না এবং অযথা ছোটাছুটি, ফোঁসফাঁস, টুসটাস এবং উৎপাত করে না। সাপু দুটো কোনো আজেবাজে খাবার খায় না- শুধু দুধভাত খেয়ে চুপচাপ বালকের বিনোদন সঙ্গীরূপে বেঁচে থাকে। কবিতার শেষ অংশে সুকুমার রায় বালকের মুখ দিয়ে যা বলার চেষ্টা করেছেন, তা বাঙালির চিরায়ত স্বভাবকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা সচরাচর অন্য কোনো শিশুতোষ কবিতায় পাওয়া যায় না। কবি বলেন, সেই সাপ জ্যান্ত, গোটা দুই আনতো, তেড়ে মেরে ডান্ডা, করে দিই ঠান্ডা।

আপনি যদি বালকের সর্পসংক্রান্ত স্বপ্ন এবং সাপ নিয়ে তার পরিকল্পনা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন তবে বাঙালির আত্মঘাতী স্বভাব, বিপরীতমুখী কর্মকাণ্ড এবং অহেতুক লম্ফঝম্ফ, দাম্ভিকতা এবং দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে সুখ অনুভব করার মনমানসিকতার পরিচয় পেয়ে যাবেন। প্রথমত বালক যে এক জোড়া সাপের আবদার করেছে সেগুলো নির্বিষ, নড়াচড়া করে না, ফোঁসফাঁস করে না। সুতরাং সেই সাপগুলোর সঙ্গে বালক কেন অমানবিক আচরণ করবে। প্রথমত কেন সে নড়াচড়া করতে অপারগ সাপগুলোকে লাঠি নিয়ে তাড়া করবে। সাপগুলো প্রাণভয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করবে কিন্তু নিজেদের দুর্বলতার জন্য বালকের সঙ্গে পেরে উঠবে না। তখন বালক তার লাঠি দিয়ে আচ্ছামতো পিটিয়ে সাপগুলোকে অজ্ঞান অথবা স্তব্ধ করে দেবে।

বালকের অভিনব স্বপ্ন এবং অভিলাষের সঙ্গে যদি আপনি আমাদের দেশের কাপুড়ে বাবুদের চরিত্র এবং তাদের সফলতার ইতিহাস খোঁজেন তবে দেখতে পাবেন যে কাপুড়ে বাবুরা কখনো আলেকজান্ডার, হ্যানিবন, সিজার, নেপোলিয়ন কিংবা খালিদ বিন ওয়ালিদ হতে চায় না। এমনকি তারা হালাকু, চেঙ্গিস অথবা হিটলার হতেও ভয় পায়। তারা এমন কিছু হতে চায়, যা কেবল তাদের ভোগবিলাস, আরাম-আয়েশ, আহারবিহারকে শতভাগ নিশ্চিত-নিরাপদ এবং ঝামেলামুক্ত করবে। এ জন্য তারা প্রতিযোগিতা-যুদ্ধ কিংবা পরিশ্রম কোনোটিই করতে রাজি নয়। তারা শুধু কূটকৌশল, ভণ্ডামি-মোনাফেকির মাধ্যমে দুর্বল ও অসহায় মানুষের ওপর তেড়ে মেরে ডান্ডা করে দিই ঠান্ডা নীতি প্রয়োগ করে- সফলতার জন্য একের পর এক কুকর্ম করতে থাকে।

আমরা আজকের আলোচনার একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এবার রাজনীতির কাপুড়ে বাবুদের হালনাগাদ হালহকিকত সংক্ষেপে বলে নিবন্ধের ইতি টানব। সারা দেশে কাপুড়ে বাবুদের ডান্ডা যেভাবে দুর্বল-অসহায় এবং নিশ্চল-নিশ্চুপ জনগণকে তাড়া করছে তাতে করে বহু মানুষের জীবনের গতি থেমে গেছে। অনেকের স্বপ্ন ভেঙে ছারখার হয়েছে। অনেকে বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে সারা দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশে অদ্ভুত এক নীরবতা আবার মাঝেমধ্যে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। জীবনের গতি ও প্রকৃতি এলোমেলো এবং আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। চিন্তায় জড়তা দেখা দিয়েছে এবং কর্মের প্রেরণা উধাও হয়ে গেছে। ফলে ডান্ডার আঘাত থেকে বাঁচার জন্য যে দৌড় অপরিহার্য তার শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কারণে নির্জীব হয়ে নির্যাতন ভোগ করার মধ্যেই বেঁচে থাকার সার্থকতা অনুভব করতে হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri
deneme bonusu veren siteler - canlı bahis siteleri - casino siteleri casino siteleri deneme bonusu veren siteler canlı casino siteleri