themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৯টা বেজে ১৫ মিনিট। হিথ্রো এয়ারপোর্ট এলাকায় তাপমাত্রা মাইনাস ১ ডিগ্রি, সঙ্গে ঝরছে কিছুটা বৃষ্টি। ঠিক এমন সময়ে রানওয়ে স্পর্শ করল বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী উড়োজাহাজ। ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণে কোটি মানুষের মোনাজাত আর এক মাতৃস্নেহ বঞ্চিত সন্তানের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে। দীর্ঘ সাত বছর পর অবশেষে সাক্ষাৎ হলো মা ও ছেলের।
ভিড়ের মধ্যে হঠাৎই মাকে জড়িয়ে ধরেন তারেক রহমান। বেগম জিয়া প্রথমে ঠাহর করতে পারেননি! কাঁধে মুখ ডোবানো তারেক রহমানের মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝে নেন- এ যে সাত রাজার ধন বুকের মানিকের স্পর্শ! দেশনেত্রী পরিচয় কিছু সময়ের জন্য পেছনে ফেলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন মমতাময়ী মা। ছেলেকে জড়িয়ে ধরার আনন্দে বাচ্চাদের মতো খিল খিল করে হেসে ওঠেন! এমন প্রাণখোলা হাসি বেগম জিয়া কবে শেষ হেসেছেন সেটা খুঁজতে ঘাটতে হবে হাজার ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ!
বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হিথ্রো পৌঁছুলে সেখানকার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে ভিআইপি প্রটোকল দেয়। বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বড় পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান এবং পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হযরত আলী খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদ। বিমানবন্দরে মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখেই কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন আপ্লুত তারেক রহমান। মা-ছেলের এই মধুর আবেগময় সাক্ষাৎ-মুহূর্ত এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করে। দীর্ঘ সাত বছর পর মায়ের সঙ্গে দেখা হবে, সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় তারেক রহমান। ছিলেন অনেক হাস্যোজ্জ্বল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মাকে কাছে পেলেন তিনি। মা ও ছেলের সাক্ষাৎ কত আকাক্সক্ষার সেটি না দেখলে বোঝা যাবে না। এ সময় তিনি পূত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানকে কাছে পেয়ে কথোপকথন সেরে নেন। এই সাক্ষাতের উষ্ণতা এতই তীব্র যে, মাইনাস তাপমাত্রার তুষারাবৃত লন্ডন যেন উষ্ণ হয়ে উঠল! তারেক রহমান মায়ের হুইল চেয়ার ঠেলে বের হয়ে এলেন ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে। তুলে নিলেন নিজের গাড়িতে। সামনে পাশে বসা স্ত্রী ডা. জুবাইদা, পেছনে মা খালেদা জিয়া। গাড়ি নিয়ে বের হতেই নিষেধ অমান্য করে এয়ারপোর্টে উপস্থিত হওয়া শত শত নেতা-কর্মীদের ভিড়! এরা সেইসব নেতা-কর্মী- যারা বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে, বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে হাজার হাজার মাইল দূরের এই দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। আগের দিন নেতা-কর্মীদের এয়ারপোর্টে ভিড় না জমানোর কঠোর নির্দেশনা দেওয়া তারেক রহমানও রাত জেগে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ভালোবাসার কাছে হার মানেন! গাড়ি থামাতে বাধ্য হন। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পশ্চিম লন্ডনের আকাশ। বেগম জিয়া আপ্লুত হয়ে হাত নাড়েন। কর্মীদের তবুও মন ভরে না। যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খসরুজ্জামান খসরু বলেন, শত শত নেতা-কর্মী সারারাত দোয়া-দরুদ পড়েছেন হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায় দেশনেত্রীর ফ্লাইট নিরাপদে নামার জন্য। ভোরের আলো ফুটতেই আমরা সবাই এখানে এসেছি গণতন্ত্রের নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য।
লন্ডন সময় বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে লন্ডন ক্লিনিকে পৌঁছায় তারেক রহমানের গাড়ি। বেগম জিয়াকে নিয়ে তিনি পেছনের দরজা দিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। সেখানেও হাজির ছিলেন নেতা-কর্মীরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষায় থাকা বেগম জিয়ার গাড়িবহর থেকে নামানো হয় লাগেজ, ওষুধের কার্টন। সঙ্গে নেমে আসেন তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা ছোট পুত্রবধূ শর্মিলা রহমানও। প্রবেশ করলেন হাসপাতালে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক চেকআপের পর পূর্র্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লন্ডন হাসাপাতালেই ভর্তি করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। ফলে আপাতত যাওয়া হচ্ছে না ছেলে তারেক রহমানের বাসায়।
যে হাসপাতালে বেগম জিয়াকে ভর্তি করা হয়েছে সেই ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’। অভিজাত এই প্রাইভেট হাসপাতালটি অবস্থিত সেন্ট্রাল লন্ডনের মারলিবর্ন রোডের ডেভনশায়ার প্লেইসে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩২ সালে স্থাপিত হয়। এই হাসপাতালটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট হাসপাতাল। এমন অভিজাত প্রাইভেট একটি হাসপাতাল যেখানে বিশ্বের বড় বড় রাজনীতিবিদ, বিখ্যাত ব্যক্তিরা চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। এই হাসপাতালের নিয়মিত রোগীদের তালিকায় আছেন রাজা তৃতীয় চার্লস, যার প্রস্টেট চিকিৎসা ২০২৪ সালে এই হাসপাতালে হয়েছে, রাজার পূত্রবধূ ও রাজপুত্র উইলিয়ামের স্ত্রী কেট মিডলটন, রাজা তৃতীয় চার্লসের বাবা প্রিন্স ফিলিপ, রাজা তৃতীয় চার্লসের বোন প্রিন্সেস মার্গারেট, ডিউক অব উইন্ডসর প্রিন্স এডওয়ার্ড, বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলর, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিসহ আরও অনেকে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন ১৯৬৬ সালের ৯ অক্টোবর এই হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর দোহায় স্বল্পসময়ের যাত্রাবিরতি করে বুধবার সকালে লন্ডনে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর আগে চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডন গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান ২০০৭ সাল থেকে লন্ডনে রয়েছেন। বেগম জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক্সরা আছেন। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্যও তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। তাঁরা হলেন- প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ড. এফ এম সিদ্দিক, নূরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। বিমানবন্দরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা তাঁকে বিদায় জানান।