বগুড়ার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কটকটির নাম কে না জানে। বগুড়ার দইয়ের যেমন বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে তেমনি সুস্বাদু এই কটকটির নামও ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। শুকনো এই মিষ্টি খাবারটি বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই খাবারটি শত শত বছর ধরেই মহাস্থানগড়ে বিক্রি হয়ে আসছে। মহাস্থানগড়ের ইতিহাসসমৃদ্ধ কটকটি এখন শতাধিক দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে এলে এই কটকটি পরিবারের জন্য নিয়ে যান।
জানা যায়, উনিশ শতকের দিকে গুড়ের তৈরি এই মিষ্টি খাবারের যাত্রা শুরু হয় স্থানীয়ভাবে। শুরুর দিকে কটকটি বেশ শক্ত ছিল এবং খেতে কটকট শব্দ হতো। এখন এ খাবারটি অনেকটাই নরম করে বানানো হয়। এলাকার কিছু মানুষ জীবিকার তাগিদে নিজ বাড়িতে একেবারে সাধারণভাবে গমের আটা দিয়ে কটকটি বানিয়ে মহাস্থান, শিবগঞ্জ, মোকামতলাসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে সুস্বাদু মিষ্টি জাতীয় খাবারটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বর্তমানে মাজার জিয়ারত করতে আসা দর্শনার্থীরা তবারক হিসেবে কটকটিকে প্রাধান্য দেন। ১৮০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছ কটকটি। প্রকারভেদে ডালডায় ভাজা কটকটি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি, ডালডায় ভাজা ঘি ¯েপ্র করা কটকটি ২২০ টাকা ও পোলার চাল দিয়ে ভাজা কটকটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা দরে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলার পাশে অবস্থিত পুন্ড্রনগর বা পুন্ড্রবর্ধন। যা মহাস্থানগড় নামে পরিচিত হয়েছে। মহাস্থান গড়ে হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহীসওয়ার (র.)-এর মাজার এলাকায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটত। জানা যায়, প্রথমে চালের গুড়ো করে আটা তৈরি করতে হয়। চালের আটার খামির করে চতুর্ভুজ আকারের ছোট ছোট টুকরা করে তা তেলে ভেজে নিতে হয়। পরে অন্যান্য মসলার সঙ্গে মেখে নিয়ে জ্বাল দেওয়া গরম গুড়ের মধ্যে ভিজিয়ে নিতে হয়। তার পর তা বাজারজাত করা হয়। কারিগররা কটকটি তৈরি করতে পারলেও কবে এ কটকটির প্রচলন হলো তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। নাসির কটকটি ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. রফিকুল ইসলাম বাদল জানান, মহাস্থানগড়ের কটকটির কথা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। যাওয়ার সময় তারা সুস্বাদু মিষ্টি এই খাবারটি নিয়ে যান। এ ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কটকটি। প্রতিদিন তিনি ৪ থেকে ৫ মণ কটিকটি বিক্রি করে থাকেন। রাজধানী ঢাকার মিরপুর থেকে ঘুরতে আসা ফাতেমা আশরাফ মন্টি জানান, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেছি। এখানকার কটকটির অনেক সুনাম রয়েছে। তাই পরিবারের জন্য কিনলাম। স্থানীয়রা বলছেন, জেলা সদরের গোকুল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী উত্তরপাড়া গ্রামের জয়নাল আলী ম ল, ভোলা ম ল ও গেদা ম ল এই কটকটি তৈরি করেছিলেন। তাদের বংশধরদের মধ্যে ভোলা ম লের ছেলে মুনছের আলী, জয়নাল ম লের ছেলে বাবলু মিয়া, গেদা ম লের ছেলে শাহাদত হোসেন, কটকটির ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে অর্থাৎ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.)-এর বিজয় দিবসে ১ থেকে ২ হাজার মণ বিভিন্ন প্রকার কটকটি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে থাকেন।