জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পাশে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে তার মিত্ররা। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী জোট ছাড়া বিগত যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল, সমমনা দল ও জোটসহ ফ্যাসিস্টবিরোধী সব রাজনৈতিক দলই এখন বিএনপির পক্ষে। বিশেষ করে ২৪-এর জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংস্কার কার্যক্রম থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার গঠন পর্যন্ত সবকিছুতেই তারা দলটির পাশে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা সবাই জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের বিপক্ষে। বরং জাতীয় নির্বাচনের ভোটের সঙ্গে একই দিনে একই খরচে গণভোটের দাবি জানিয়েছেন তারা। এমনকি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারাও এখন জাতীয় নির্বাচনের ভোটের সঙ্গে একই দিনে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপির সমর্থিত তিনটি জোটেই রয়েছে ৩০টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ সাতটি দল নিয়ে গঠন হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিশ দলীয় জোট ভেঙে গঠিত হয়েছে ১২ দলীয় জোট। আর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নামে একত্রিত হয়েছে ১১টি রাজনৈতিক দল। এ ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোট, সিপিবিসহ ফ্যাসিস্টবিরোধী সব রাজনৈতিক দলই এখন বিএনপির পাশে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি বিভিন্ন ইসলামী দলসহ হেফাজতে ইসলাম পর্যন্ত এখন বিএনপির সঙ্গেই একত্রিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিষ্কার ভাষায় বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ একটি শক্তি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তবে তারা সফল হবে না। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের তিন মাসের মধ্যে যদি নির্বাচন হয়ে যেত, তবে এই অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সাহস পেত না। আমাদের ঘোষিত ৩১ দফায় সব সংস্কারের বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আমরা সংস্কারের পক্ষে অবস্থান করছি। পিআর না হলে নির্বাচন হবে না- এসব কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তবুও সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে ইনশাল্লাহ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের জনগণের জুলাই সনদের দরকার নেই। জনগণের প্রয়োজন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই জুলাই সনদ মূলত উপদেষ্টাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য কাজে লাগবে, জনগণের স্বার্থে নয়। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের স্বার্থে অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়েছে, যাতে করে একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু অনেকে সেটাকে বিএনপির দুর্বলতা মনে করছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র থামাতে বিএনপি ও গণতন্ত্রমঞ্চ যুক্ত হয়ে কীভাবে নির্বাচন করতে পারে, সেটি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য হলে সেটি সবার জন্যই ভালো হবে। গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচনের বিরুদ্ধে সবাই। আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছি। জনস্বার্থে এখনো আছি। ভবিষ্যতেও থাকব।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি আবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন চাই। এর আগে গণভোট বা অন্য কোনো নির্বাচন নয়। আর আমরা বিএনপির সঙ্গে ছিলাম এবং আছি।
গণভোট নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপর নির্বাচিত সংসদ জনগণের মতামত আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়। এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের।
অন্যদিকে বংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি এটা অন্তর্বর্তী সরকার করতে চায়, জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। কাজেই সব বাদ দিয়ে ন্যাশনাল ইলেকশনটা আগে দিয়ে দেন।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ’২৪-এর জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংস্কার কার্যক্রম থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন পর্যন্ত সবকিছুতেই লেবার পার্টি বিএনপির সঙ্গে একমত। আমরা শরিক ও সমমনা দলগুলো এসব বিষয়ে বিএনপির পাশে শক্ত অবস্থান নিয়ে আছি।