themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114জামালপুরের রানাগাছা ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের বৃদ্ধ বিধবা ওমেছা খাতুন। ’৮৮ সালের বন্যার পর থেকেই বসবাস করছেন ঢাকার ফুটপাতে। জমি নেই, ঘর নেই। স্বামী মারা গেছেন কত বছর আগে মনে নেই নির্দিষ্ট দিনক্ষণ। রাজধানীর খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টারের পাশের ফুটপাতে ঝুপড়িতে থেকেই বড় করেছেন দুই ছেলেমেয়েকে, বিয়ে দিয়েছেন। হয়েছে নাতি-পুতি। রিকশাচালক ছেলেও মায়ের ঘরের পাশে আরেকটা ঝুপড়ি তুলে সংসার পেতেছেন। সরকারের হিসাবে এই ছিন্নমূল পরিবারটি ভূমিহীন বা গৃহহীন নয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের মাঝামাঝি দেশের ৫৮ জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলাকে সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করে। গত বাজেট অধিবেশনে সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া তথ্যমতে, দেশের ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। তবে ভূমিহীন ও গৃহহীনের সেই তালিকায় নেই ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুরের বাসিন্দা ওমেছা খাতুনের নাম। নাম নেই জামালপুরের একই ইউনিয়নের জহুরুল হক বা রাশেদার নাম (গ্রামে ওই নামেই পরিচিত)। তারাও বাস করছেন এই ফুটপাতেই। বৃদ্ধা রাশেদা জানান, তার বাড়ি কানিল গ্রামে। ৪০ বছরের বেশি ঢাকার ফুটপাতে থাকছেন। স্বামী মারা গেছেন ১৩ বছর আগে। কোনো ভাতার কার্ড নেই। ঘর নেই, জমি নেই। মানুষের বাসায় কাজ করে পেট চলে। ১০ হাজার টাকা দিলে ঘরের ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানিয়েছিলেন এলাকার মেম্বার। সেটা পারেননি বলে ঘর পাননি।
ওই ফুটপাতেই থাকেন নোয়াখালীর ভূঁইয়ার হাটের সামেনা খাতুন। বয়স ৫০ জানালেও চেহারায়-শরীরে ৮০ বছরের বৃদ্ধার ছাপ। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ১২ বছরের একটি মেয়ে সঙ্গে থাকে। একমাত্র ছেলে কয়েক বছর আগে ওই রাস্তাতেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতে কিছু নেই। তাই যাই না। কোথায় থাকব? কী খাব? ঢাকাতেই ভোটার হয়েছি। তবে কোনো ভাতার কার্ডও পাইনি। ঘরও কেউ দেয়নি। খিলগাঁওয়ের ওই ফুটপাতে ঝুপড়ি তুলে যুগ যুগ ধরে বাস করছে দুই ডজনের বেশি পরিবার। ফুটপাতেই সন্তান হচ্ছে। সেই সন্তান বড় হচ্ছে। বিয়ে হচ্ছে। তাদেরও বাচ্চা হচ্ছে। তবে সরকারের ভূমিহীন বা গৃহহীনের তালিকায় নাম নেই পরিবারগুলোর। এ ছাড়া রাজধানী ঘুরে শত শত মানুষকে এই শীতের মধ্যেও ফুটপাতে রাত কাটাতে দেখা গেছে। কুকুরকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে পথশিশুদের। এমন পরিস্থিতিতে পাঁচটি বিভাগকে সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গৃহহীন ও ভূমিহীনের পরিসংখ্যান নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীনের আবাসনের ব্যবস্থা করতে ২০২০ সালে তালিকা প্রস্তুত করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেখানে ভূমিহীন, গৃহহীন ও ভূমি থাকলেও ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমিহীনের সংখ্যা নিয়ে তখনই বিতর্ক ছিল। ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত বিভাগ ঘোষণা ছিল বাস্তবতাবিবর্জিত বিষয়। বাহবা নিতে এটা করা হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের নামে সব কর্মসূচি সরকারদলীয় লোকদের অবৈধ উপার্জনের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সত্যিকার অসহায়রা বঞ্চিত হয়েছে। আগে এটা নিয়ে কথা বলতে পারেনি কেউ। এখন সুযোগ এসেছে। অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা দরকার।