প্রায় ২ কোটি মানুষের এই রাজধানীতে নিম্নআয়ের শ্রমজীবীর সংখ্যা বাড়ছেই। প্রতি দিনই সারা দেশ থেকে কাজের খোঁজে মানুষ আসছে ঢাকায়। বাড়ছে ভ্রাম্যমাণ মানুষের সংখ্যা। সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। কমছে তাদের ক্রয়ক্ষমতা। নিত্যপণ্যের বেসামাল মূল্যবৃদ্ধিতে বাজার অস্থির। সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুঃখ ঘোচেনি। তারা খুবই কষ্টে আছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের সামনে পণ্য কিনতে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সারিতে দাঁড়ানো মানুষের মধ্যে হট্টগোল, কথা কাটাকাটিও হচ্ছে। পাশাপাশি পণ্য বিক্রিতে অনিয়মেরওঅভিযোগ ক্রেতাদের মধ্যে। অগ্নিমূল্যের বাজারে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে ভিড় করেন ক্রেতারা। তাই তো নগরীর সেল পয়েন্টগুলোতে ট্রাকের সামনে কাঠফাটা রোদেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা নারী-বৃদ্ধসহ নানা বয়সি মানুষ ভিড় করেছেন কম দামে চাল, ডাল ও তেল কিনতে। নিম্নআয়ের মানুষ তো বটেই, লজ্জা ভুলে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষও দাঁড়িয়েছেন লাইনে। স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে আসা একজন মধ্যবিত্ত বলেন, বাজারে পণ্যের দাম অনেক বেশি তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি। তবে ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। এমন বাস্তবতায় ‘সেল পয়েন্ট’ বাড়ানোর চিন্তা করছে টিসিবি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মেট্রো স্টেশনের পাশে টিসিবির ট্রাক থেকে তিনটি পণ্য বিক্রি হয়। গতকালও এই পয়েন্টে ট্রাক সেল হয়। প্রত্যেক ক্রেতাকে ২ লিটার করে ভোজ্য তেল, ২ কেজি করে মসুর ডাল ও ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দাম ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৬০ টাকা আর প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। কম দামে এ পণ্য কিনতে ট্রাক আসার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই অনেক ক্রেতা অপেক্ষায় ছিলেন। ট্রাক আসার সঙ্গে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে এবং সেই সঙ্গে সারির দীর্ঘ বাড়তে থাকে। দুপুর ১টার দিকে দেখা যায়, ট্রাকের পাশে দুজন ব্যক্তির মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম। এ পরিস্থিতিতে বেচাকেনা কিছুক্ষণ বন্ধও থাকে। পণ্য কিনতে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই সিরিয়াল ভেঙে পণ্য কিনছেন। এমনকি এক ব্যক্তি একাধিকবার পণ্য কিনছেন বলেও অভিযোগ। এর ফলে যারা অনেকক্ষণ সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদের অনেকেই পণ্য কিনতে পারেননি। টিসিবির একেকটি ট্রাকে ৩৫০ জন মানুষের জন্য পণ্য থাকে। প্রথম ৩৫০ জনের পরে যারা লাইনে থাকেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই পণ্য পান না। কিন্তু তার মধ্যে অনিয়মের কারণে যারা আগে থেকে সারিতে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের অনেকেই পণ্য কিনতে পারেন না।
এসব কারণে প্রতিটি ট্রাকের সারিতেই নিয়মিত হট্টগোল হয়। হট্টগোলের কারণে পণ্য বিতরণে দেরি হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর ৫০ স্থানে গতকাল টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম ট্রাক সেল চলে। এই ৫০ জায়গা হলো রামপুরা টিভি সেন্টার, পলাশ নগর জামে মসজিদ, কলেজ গেট, উত্তর বাড্ডা প্রধান সড়ক, শাহজাদপুর, আফতাবনগর আনসার ক্যাম্প, আদাবর থানা, শেরেবাংলা নির্বাচন কমিশন, খামারবাড়ী মোড়, এফডিসি গেট, মহানগর প্রজেক্ট পানির পাম্প, ঢাকা মেডিকেলের সামনে, এফডিসি গেট, বাটা সিগন্যাল (এলিফ্যান্ট রোড), পান্থপথ মোড় ইত্যাদি।
উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরে পণ্য কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, ঘরের কাজকর্ম ফেলে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সমস্যা। ট্রাক থেকে মাত্র ৩৫০ জনকে পণ্য দেওয়া হচ্ছে, সংখ্যাটা খুব কম। সংখ্যা বাড়ানো হলে এই সমস্যা কমতো বলে মনে করেন তিনি।
দেশে প্রায় দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তিন মাস আগে সরকার বদল হলেও বাজার পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এমন বাস্তবতায় নিম্নআয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে তেল, ডাল ও চাল বিক্রি করছে টিসিবি। এর বাইরে দেশে এক কোটি পরিবার কার্ডধারীর মধ্যে প্রতি মাসে কিছু পণ্য বিক্রি করে টিসি