themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114দুবাইভিত্তিক সোনা চোরাচালানে আলোচিত ৮৩ সিন্ডিকেটের প্রধান এনামুল হক খান দোলন ওরফে চোর দোলনের অর্থ পাচার মামলা গায়েব। সূত্র
বলছে- প্রায় পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে দোলনের সোনা চোরাচালানের সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয় দুবাই ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তথ্য পেয়ে বিএফআইইউ এবং শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত ও অনুসন্ধান শুরু করে। এই উদ্যোগ ধামাচাপা পড়ে তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ওবায়েদুল কাদের, আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদের হস্তক্ষেপে। এক্ষেত্রে তাকে সব রকম সহযোগিতা করেন ছাত্রহত্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ও দোলনের সোনা চোরাচালান ব্যবসার মূল পার্টনার দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। সূত্র বলছে- রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে গোল্ড হাউস নামের দোকানে মণে মণে সোনার পাইকারি ব্যবসা করেন দোলন। তার মালিকানাধীন অন্য দুই প্রতিষ্ঠান হলো- শারমিন জুয়েলার্স ও ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভাস। বর্তমান সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএফআইইউ-তেও ব্যাপক রদবদল হয়েছে। বিগত সরকারের আমলের নীরবতা ভেঙে নতুন করে সব সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও চোরাচালানের তথ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএফআইইউ। সংস্থাটি রাজধানী কেন্দ্রিক সোনা চোরাচালানে জড়িত সন্দেহে শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সময়ে সোনা চোরাচালানবিরোধী অভিযানে নামছে বিএফআইইউ। তবে সোনা চোরাচালানবিরোধী অভিযানে এক সময়ের আলোচিত সংস্থা শুল্ক গোয়েন্দা এখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। যদিও সোনা চোরাচালানের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে দাবি করেন শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক মোহাম্মাদ ফখরুল আলম।
সূত্র জানায়, শুল্ক গোয়েন্দা থেকে এনামুল হক খান দোলন ওরফে চোর দোলনের সোনা চোরাচালান ও অর্থ পাচার মামলার অনেক নথি গায়েব হয়েছে। সংস্থাটিতে তদন্তকালে প্রায় ২ কোটি টাকার ঘুষের বিনিময়ে দোলনের অর্থ পাচারের নথি গায়েব হয়। এক্ষেত্রেও দোলনকে সহযোগিতা করেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেট ঘিরে দোলনের অবৈধ সোনার ব্যবসার শাক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। চোরাকারবারের মাধ্যমে তিনি অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন তিনি অবৈধ কারবার চালিয়ে গেলেও, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি হাসিনা সরকার।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, টনে টনে সোনা ক্রয়- বিক্রয় করলেও দোলনের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোনো আমদানি নেই। কয়েক বছরের রেকর্ড খুঁজে ১০ কেজি বৈধ সোনার তথ্য পাওয়া যায়নি। আমদানি না করেও জমজমাট পাইকারি ব্যবসার খোঁজ করতে গিয়ে দুবাইভিত্তিক চোরাচালানের খবর পাওয়া যায়। এরপর এনামুল হক দোলনের ভ্রমণ-তথ্য চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি দেওয়া হয়। জবাবে ইমিগ্রেশন পুলিশ দোলনের বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কে যে তথ্য পাঠায় তা রীতিমতো বিস্ময়কর। এতে দেখা যায়, অজ্ঞাত কারণে দোলন প্রায় প্রতি সপ্তাহে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যে। তার নিয়মিত গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের লাসভেগাসখ্যাত অভিজাত শহর দুবাই। এমনকি সপ্তাহে ২-৩ বারও সেখানে যাতায়াত করেছেন তিনি।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, শারমিন জুয়েলার্স, ৬৭ বায়তুল মোকাররম ঢাকা-এর স্বত্বাধিকারী এনামুল হক খানের ব্যবহৃত সব পাসপোর্টে বিদেশ ভ্রমণের তথ্য প্রয়োজন। এতে তিন বছরের ভ্রমণ-তথ্য চাওয়া হয়। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি এবং ৭ জুলাই পাঠানো পৃথক প্রতিবেদনে দোলনের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য পাঠানো হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অনুযায়ী এনামুল হক খানের পাসপোর্ট নম্বর বিএন-০৯৭৩৫৬৬, বিএক্স-০৭৩৪৫২৫, বিএইচ-০৮৯৩৯৯৪ এবং বিসি-০১৪৪১৫২-এর মাধ্যমে গমনাগমনের তথ্য এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হলো। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ১৮ মাসে এনামুল হক তার বিএন-০৯৭৩৫৬৬ নম্বর পাসপোর্ট ব্যবহার করে ৩৬ বার বিদেশে যান। এর মধ্যে ২৬ বারই গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এ ছাড়া বিএক্স-০৭৩৪৫২৫ নম্বর পাসপোর্টে ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত বিদেশ যান ১৪ বার। এর মধ্যে মাত্র চারবার গেছেন ভারত এবং থাইল্যান্ডে। বাকি ১০ বার যান সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রতিবারই তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দুবাই ভ্রমণ করেন। এক বা দুই দিনের মধ্যেই তিনি ফিরে আসেন। তবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে দোলন সতর্ক হয়ে যান। তিনি দুবাই ভ্রমণের রেকর্ড লুকাতে ভিন্ন রুট বেছে নেন। দোলনের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য হাতে পাওয়ার পর শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে উঠে আসে তিনি দুবাইয়ের স্থায়ী আবাসিক কার্ডধারী। এ জন্য দুবাই বিমানবন্দরে তিনি বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। ফলে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে সহজেই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যাতায়াত করতে পারেন। সূত্র জানায়, চোরাই সোনার ব্যবসা করে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন দোলন। ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট ছাড়াও তার ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের অর্থ রয়েছে। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতেও তিনি পাঁচ তারকা হোটেল স্টাইলে অভিজাত বাংলো বানিয়েছেন। এই বাড়ি নির্মাণের জন্য যাবতীয় ফিটিংসহ গৃহসজ্জার উপকরণ আনা হয় দুবাই ও ইতালি থেকে।