themesdealer
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/notunalo/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে হঠাৎ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ কর্মসূচি স্থগিত করেন। চিকিৎসকরা শর্তসাপেক্ষে জরুরি সেবা চালুর ঘোষণা দেন। গতকাল বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানের কক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র চিকিৎসক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে দোষীদের শাস্তি ও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখার আহ্বান জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুটি আলাদা কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সাংবাদিকদের বলেন, যে চিকিৎসকরা কভিড, ডেঙ্গু, কোটা আন্দোলনের আহতদের সেবা দিয়ে চলেছেন তাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা সব বড় হাসপাতালে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করব। যারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এক্ষেত্রে আমরা একটু সময় চাইছি। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে শিগগিরই অপরাধীদের শনাক্ত করা হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা কর্মবিরতি তুলে নিয়েছেন। কর্মবিরতির কথা বললেও তারা রোগীদের ক্ষেত্রে মানবিক ছিলেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। জরুরি সেবা এখন থেকে চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি সেবাও চালু করা হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসকরা জরুরি সেবা এখন থেকে চালু করবেন। তারা কমপ্লিট শাটডাউন থেকে সরে এসেছেন। আমরা পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের সমন্বয়ে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করব।
এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। তারা বলেন, বৈঠকে সিনিয়র চিকিৎসক এবং প্রশাসনের লোকজন আলোচনা করেছেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা হয়নি। একজন ডাক্তারের বিপরীতে একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিশ্চিত করা হলে আমরা ৫ মিনিটের মধ্যেই জরুরি সেবা ও ইনডোর সেবা চালু করে দেব। তবে আমাদের রুটিন সেবা, আউটডোর সেবাসহ অন্যান্য সার্ভিস বন্ধ থাকবে। সাত দিনের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং স্বাস্থ্যসেবায় আলাদা পুলিশ ইউনিট নিশ্চিত না করা হলে কমপ্লিট শাটডাউন দেওয়া হবে। তবে আইসিইউ, এইচডিইউ সেবা চলমান আছে বলে তারা জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শনিবার রাতে তিন দফায় হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অন্য চিকিৎসকরাও তাদের কর্মবিরতিতে সংহতি জানালে গতকাল সকাল থেকে হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়।
হামলাকারীদের আটক ও শাস্তির পাশাপাশি সারা দেশে চিকিৎসক এবং রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দুই দফা দাবি জানানো হয় চিকিৎসকদের তরফ থেকে। কিন্তু দাবি পূরণের আশ্বাস না মেলায় দুপুরে সারা দেশে সব চিকিৎসা কেন্দ্রে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
পরে সারা দেশে চিকিৎসকদের ধর্মঘটের ডাক দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (নিউরো সার্জারি গ্রিন ইউনিট) আবদুল আহাদ। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যেসব ঘটনা ঘটেছে, আমরা নিজের জীবন বাজি রেখে, সারা বাংলাদেশে সার্ভিস দিয়েছি। ডাক্তাররা চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে দিয়েছে। খাবার দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, ২৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত টানা চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। আমরা ডাক্তার, আমরা মানবতার সেবক, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরই পার্ট।’
গত শনিবার রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘প্রথম ঘটনা আমাদের নিউরো সার্জারি বিভাগে। একজন আবাসিক ডাক্তার অপারেশন করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে যান। রোগীর লোক তাকে বের করে মারে। তাকে সেভ করার জন্য আমাদের আরেক ডাক্তার ওখানে যান, তখন তার ওপরও অতর্কিত আক্রমণ করে। কলার ধরে তাকে ২০১ নম্বর অপারেশন থিয়েটারের সামনে থেকে ডিরেক্টর স্যারের সামনে নিয়ে আসে। মারতে মারতে নিয়ে এসে এখানেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। স্যারের অফিসে পিএ এর চেয়ারে তিনি বসেছিলেন। এখানেও তার ওপর আক্রমণ করা হয়।’
ডা. আবদুল আহাদ আরও বলেন, ‘কালকে রাতে আরও দুটি ঘটনা ঘটে। একটা ঘটনা হচ্ছে, একটি গ্রুপ বাইরে আরেকটা গ্রুপকে আক্রমণ করে। সেই গ্রুপ সেবা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে এসেছিল। তাদের যে বিরোধী পক্ষ ছিল, তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভিতরে ঢুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ওই রোগীর হত্যা নিশ্চিত করে চলে গেছে। এখানে রোগীও নিরাপদ নয়। আপনারা কোথায় সেবা নিতে আসবেন। আরেকটা ঘটনা, ইমারজেন্সি রুমে একজন কিডনি রোগী এসেছিল। রোগী মারা যাওয়ার পর চিকিৎসকের ওপর হামলা হয়। ইমারজেন্সি কমপ্লেক্সে ওসেক (অনস্টপ ইমারজেন্সি সেন্টার) ভাঙচুর করা হয়। এখানে চিকিৎসক-রোগী কেউই নিরাপদ নয়।’
গত শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তিনি গত শনিবার সকালে মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনায় রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর করে। এ পরিস্থিতিতে কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রায় ২০০ শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। ফলে গত শনিবার রাতেই অনেক বিভাগে সেবা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের এই কর্মসূচিতে অন্য চিকিৎসকরা সংহতি জানালে গতকাল সকাল থেকে জরুরি বিভাগ, ইনডোর, আউটডোরসহ সব বিভাগে সেবা বন্ধ হয়। ফলে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েন দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা। স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে বিকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, হাসপাতালের পরিচালক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও চিকিৎসকদের দীর্ঘ বৈঠক শেষে শর্তসাপেক্ষে জরুরি সেবা চালুর ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।